করোনায় বদলাচ্ছে শৈশব, আলগা বন্ধুত্বের টান! সবুজ মাঠ ছেড়ে ছেলেবেলা বন্দি অন্তর্জালে!

করোনায় বদলাচ্ছে শৈশব, আলগা বন্ধুত্বের টান! সবুজ মাঠ ছেড়ে ছেলেবেলা বন্দি অন্তর্জালে!

মৌমিতা বিশ্বাস: ‘বন্ধু চল রোদ্দুরে… মন কেমন মাঠ জুড়ে, খেলব আজ ওই ঘাসে, তোর টিমে, তোর পাশে৷’

বন্ধুর হাতে হাত রেখে মাঠ জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো সেই দুপুর আজ নিঃসঙ্গ৷ নেই খুনসুটি, আড্ডা৷ নেই চুরমুর, ফুচকা৷ বন্ধুরা আজ বড্ড একা৷ যে যার মতো আটকা পড়েছে ঘরের চার দেওয়ালে৷ মন কেমন করা বিকেলগুলো কাটছে ঘরের কোনে৷ কোনও দিন আবার কি তারা ফিরে পাবে সেই দিনগুলো? 

কোভিড-১৯ কেড়েছে মানুষের প্রাণ৷ কাড়ছে শৈশব৷ লকডাউনে দীর্ঘ দিন বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ৷ পড়ুয়াদের নিত্য দিনের রুটিন এখন আটকা পড়েছে অন্তর্জালে৷ বাইরের দুনিয়া বন্দি হয়েছে মুঠোফোনে৷ ধুলো জমেছে স্কুল ব্যাগে৷ বাবা-মায়ের হাত ধরে কিংবা সাইকেল নিয়ে দলবেঁধে কোচিং ক্লাসে ছুটে যাওয়ার তাড়াহুড়ো আর নেই৷ নেই ক্লাস, ফাঁকি দিয়ে মাঠে লুটোপুটি৷ সব যেন আজ ওলটপালট হয়ে গিয়েছে৷ ঘরে বসে পুরনো দিনগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর কাছে হয়ে উঠেছে ‘রূপকথা’৷

স্কুলের দিনগুলো ফিরে পেতে বড্ড ইচ্ছা করে তাদের৷ কত দুষ্টু-মিষ্টি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে ক্লাসরুমের ওই দেওয়ালে আর প্রতিটি ডেস্কে৷ কিন্তু আপাতত তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই৷ শুধু স্কুলগুলি নয়, সরকারও জোড় দিচ্ছে অনলাইন ক্লাসের উপরেই৷ কিন্তু পড়া যদিও বা হল,  ঘরে বসে তাদের কে শোনাবে বিটনুন আর চুরমুরের গল্প? গল্পেরা আজ একাকী পড়ে রয়েছে সবুজ ঘাসে৷ করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে কবে স্কুল খুলবে এখনও জানা নেই৷ যদিও বা খোলে তাহলেও কি আগের মতোই থাকবে সব কিছু? একেবারেই নয়৷ এখন প্রতিটি মানুষের জীবনের বেঁচে থাকার মন্ত্রই সোশ্যাল ডিস্টেনসিং৷ মুখের মাস্ক হয়েছে নিত্যসঙ্গী৷ বন্ধুর হাতে হত নয়, বরং হাতে থাকবে স্যানিটাইজার৷ ঘেঁষাঘেষি করে সহপাঠীর পাশে বসা আর হবে না৷ সবাই থাকবে দূরে দূরে৷ 

স্কুলে গিয়ে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার সেই আনন্দ হয়তো আর থাকবে না তাদের জীবনে৷ তাদের শেখানো হবে ছোঁয়াচ বাঁচানোর মন্ত্র৷ প্রতিটি মানুষের কাছে আজ প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠেছে অস্পৃশ্য৷ সবাই সবাইকে দেখছে সন্দেহের চোখে৷ যেন ফিরে এসেছে হারানো শুচিবাইতা৷ ক্লাস শুরু হওয়ার পরও প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর রোজ স্কুলে আসার সুযোগও হয়তো হবে না৷ খুব সম্ভবত, রোল নম্বরের জোড়-বিজোড় ফর্মুলা মেনেই খুলবে স্কুলের দরজা৷ তাই বন্ধুর সঙ্গে যে দেখা হবেই, সেটাও অনিশ্চিত৷ এই সংকটে ক্রমেই যেন মলিন হচ্ছে শৈশবের প্রণোচ্ছ্বলতা৷ শিশু মনের স্বতঃস্ফুর্ততাকে গিলে খাচ্ছে মারণ করোনা৷ 

হয়তো আগামী বেশ কয়েক বছর অনুপমের সুরে সুর মিলেয়ে আর কেউ বলবে না, ‘‘বন্ধু চল, বলটা দে, রখব হাত তোর কাঁধে, গল্পেরা ওই ঘাসে, তোর টিমে, তোর পাশে৷’’

সঠিক খবরের জন্য নজর থাকুক…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + 11 =