মধুরেণ সমাপয়েৎ! মনের মানুষের সঙ্গে বাগদান চাকরি-প্রেম খুইয়ে ধর্নায় বসা সেই তরুণীর

মধুরেণ সমাপয়েৎ! মনের মানুষের সঙ্গে বাগদান চাকরি-প্রেম খুইয়ে ধর্নায় বসা সেই তরুণীর

কলকাতা: আদালতের রায়ে শিক্ষিকার চাকরি খোয়াতেই বিয়েতে বেঁকে বসেছিল হবু বর৷ সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই প্রেমিকের বাড়িতে ধর্নায় বসেছিলেন চাকরি থেকে বরখাস্ত প্রেমিকা৷ অপমান সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে পড়েছিলেন প্রেমিকের বাড়ির দোরগোড়ায়৷ অবশেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ৷ কোচবিহারের নিশিগঞ্জের অতিথি অধ্যাপক প্রেমিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হলেন প্রাথমিক স্কুলের চাকরি হারানো তরুণী। সম্পন্ন হল তাঁদের রেজিস্ট্রি বিবাহ৷  তাঁদের এই আইনি বিয়েতে সাক্ষী দিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা৷ কব্জি ডুবিয়ে খেলেন প্রতিবেশীরা৷ আজ রাতেই তাঁদের সামাজিক বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন পুরোহিতমশাই৷ 

আরও পড়ুন- Breaking: বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য ‘ডেডলাইন’ দিল আদালত, কড়া বার্তা

তবে প্রেমিককে ফিরে পাওয়ার লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না৷ শত অপমান সহ্য করেও প্রেমিকের দুয়ারে পড়েছিলেন নিবেদিতা দেব৷ ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার এই লড়াইয়ে ছিল টানটান উত্তেজনা৷ চাকরি হারানো প্রেমিকাকে কি বিয়ে করবেন প্রেমিক? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল নিশিগঞ্জের অলি-গলিতে৷ 

এরই মধ্যে শুরু হয়, একে অপরকে দোষারোপের পালা৷ নিবেদিতাকে কোনও ভাবেই স্বীকতি দিতে নারাজ ছিলেন প্রণব গোস্বামীর মা৷ তবে ওই নিবেদিতার বিশ্বাস ছিল, ভালোবাসা সত্যি হলে ভালোবাসার মানুষকে কেউ ছাড়তে পারে না৷ সাময়িক দূরত্ব এলেও তা একদিন ঠিক ঘুঁচে যাবেই৷ তাই তো লোকলজ্জার পরোয়া না করে, সেই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ সব শেষে তাঁর মুখে যদ্ধজয়ের হাসি৷   

সোমবার আদালতের নির্দেশ আসার পরেই চাকরি হারানোর কথা জানতে পেরেছিলেন মাথাভাঙার বাসিন্দা ওই তরুণী। তাঁর দাবি, আদালতে রায় বেরনোর আগে পর্যন্ত তিনি প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তার সঙ্গে ঘোরাফেরা করেছেন৷ প্রণবই তাঁকে বলেছিলেন বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে৷ কারণ তাঁর বাড়ির লোক তাঁদের সম্পর্কের কথা জানার পর তাঁকে মারধর করেছিলেন৷ সেটা শুনেই প্রণব বলেছিলেন, কেউ তাঁর প্রেয়সীর গায়ে হাত তুলুক তা নাকি তিনি মেনে নিতে পারবেন না৷ অথচ আদালতের রায় প্রকাশের পরেই রাতিরাতি উধাও হয়ে যান প্রণব৷ প্রেমিকের বাড়িতে এসে দেখেন তিনি বাড়িতে নেই৷ পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের ছেলে বিয়ে করতে নারাজ৷ এর পর প্রমিকের বাড়ির সামনেই ধর্নায় বসেন নিবেদিতা৷

কেন হঠাৎ এই সুর বদল? তবে কি চাকরি হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে না পেরেই বাড়ি ছেড়েছিলেন প্রেমিক? ওই তরুণীর কথায়, ‘‘চাকরি হারানোর আগে আমাকে বাড়ি ছেড়ে আসতে বলেছিল৷ চাকরি যাওয়ার পর বলছে বিয়ে করতে পারবে না৷ এই ভোলবদলের পিছনে চাকরি ছাড়া অন্য কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না৷’’   

এদিকে ওই যুবকের মায়ের দাবি ছিল, ওদের মধ্যে কোনও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না৷ ওই তরুণীই দিনরাত তাঁর ছেলেকে ফোন করত৷ বড়জোর দিন ১৫-র সম্পর্ক হবে ওদের৷ কোন হিসাবে সে একটা ছেলের বাড়িতে চলে এল? তাঁর সাফ কথা, কোনও ভাবেই এই মেয়েকে আমরা মানব না৷ তবে ওই তরুণীই নাছোড়৷ তাঁর পাল্টা দাবি, ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক৷ তাঁর কাছে দু’জনের একাধিক ছবিও রয়েছে৷  

প্রথমে মন কষাকষি চললেও ঝড়-জল-বৃষ্টি মাথায় ঠায় বাড়ির সামনে মেয়েটিকে বসে থাকতে দেখে মন গলে প্রণবের মায়েরও৷ তিনি নিজেই নিবেদিতাকে ঘরে বসতে বলেন৷  বেশিদিন মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেননি প্রণবও৷ ফিরে আসেন বাড়িতে৷ 

তাঁর কথায়, দুই পক্ষ বিয়েতে সম্মতি জানিয়েছে৷ পাড়া-প্রতিবেশিরা এসে বিষয়টা মীমাংসা করেছে৷ সকলের সম্মতিক্রমে বিয়েতে রাজি হয়েছি৷ আমি খুশি৷ আজ আশীর্বাদ হয়ে গেল৷ অন্যদিকে, ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত নিবেদিতা৷