হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে অধীরের ক্ষোভ! এমনটা হবে আগেই জানিয়েছিল ‘আজ বিকেল’

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে যে সমস্ত আসনে বামেদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীরা লড়ার জায়গায় ছিলেন, এমনকী একাধিক আসনের জেতার মতো জায়গায় ছিলেন, সেখানে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব…

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে যে সমস্ত আসনে বামেদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীরা লড়ার জায়গায় ছিলেন, এমনকী একাধিক আসনের জেতার মতো জায়গায় ছিলেন, সেখানে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রচারে এলেন না। শুধুমাত্র বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়ার মতো করে মালদায় প্রচারে এসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। কিন্তু প্রচারে এসে তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কার্যত তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণই করতে দেখা যায়নি তাঁকে।

এমনটা যে হতে পারে সেটা অনেক আগেই জানিয়েছিল ‘আজ বিকেল’। এবার এটি প্রাসঙ্গিক হল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলায়। তিনি গোটা বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এআইসিসি’র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর একবারের জন্যও ফোন করে খবর নেননি রাজ্য নেতৃত্ব কোনও অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন কিনা। নিজের লড়াই একাই লড়েছেন বলে স্পষ্ট জানাচ্ছেন অধীর। সকলেই জানেন কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে এবার বহরমপুরে লড়তে হয়েছে অধীরকে। তৃণমূল ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যেখানে বারবার প্রচার করেছেন, সেখানে অধীর একা লড়ে গিয়েছেন।

আসলে তৃণমূলের বিরোধিতা করতে হবে বলে বাংলায় কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বকে আসতে দেখা যাচ্ছে না। এটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশলী চাল। ঘটনা হল একের পর এক রাজ্যে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট ধাক্কা খেয়েছে। বিহারে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে জেডিইউ। কর্নাটকে জোট ছেড়েছে জেডিএস। পাঞ্জাবেও জোট হয়নি কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যে। আর পশ্চিমবঙ্গে যে জোট হবে না সেটা বহু আগেই বোঝা গিয়েছিল। যথারীতি সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে জোট হয়েছে কংগ্রেসের। কিন্তু সেই জোট মন থেকে মেনে নেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড। তাই পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসার ব্যাপারে প্রথম থেকেই অনীহা দেখা যায় রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশ, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের। কারণ একটাই, এখানে এসে তাঁদের তৃণমূলের বিরোধিতা করতে অসুবিধা হবে। যদি আসতেই হয় তাহলে শুধু বিজেপির বিরুদ্ধেই তাঁরা সুর চড়াবেন, এমনটাই শোনা যাচ্ছিল কংগ্রেস সূত্রে। কিন্তু শেষপর্যন্ত রাহুল-প্রিয়াঙ্কা কেউই এলেন না।

উল্লেখ্য তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে প্রথম থেকেই প্রবল আপত্তি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ বাংলার অধিকাংশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও শেষ পর্যন্ত জোটের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। সেই কারণে সন্দেশখালি ইস্যুতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। এমনকী তৃণমূল একতরফা ভাবে ৪২টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরেও হাইকমান্ডকে সেভাবে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। উল্টে জয়রাম রমেশ তখনও আশার কথা শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন এমনও তো হতে পারে যে শেষ মুহূর্তে তৃণমূল কয়েকটি আসন থেকে প্রার্থী তুলে নিল। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন মানসিকতা থেকেই পরিষ্কার যে তাঁরা রাজ্যে প্রচারে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলতে চাইছেন না। তাতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন ভাবনাই কাজ করছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। বলাবাহুল্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই ভূমিকায় হতাশ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও দলের গঠনতন্ত্রের কথা ভেবে তাঁরা সরাসরি এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরোধিতা করতে পারছেন না। বহুদিন ধরে সাধ্যমত চেষ্টা করে বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেখানে হাইকমান্ডকে রাজ্য কংগ্রেসের পাশে কখনই দাঁড়াতে দেখা যায় না। একদিকে প্রবল অর্থাভাবে ভুগছে রাজ্য কংগ্রেস, অন্যদিকে ‘মরাল সাপোর্ট’ পর্যন্ত তাঁরা পাচ্ছেন না হাইকমান্ডের কাছ থেকে। এভাবে কী আদৌ লড়াই চালানো যায়? চালাতে পারলেও আর কতদিন এসব সহ্য করা যায়? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। তাই বহরমপুরের ভোট মিটে যেতেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে আর দেরি করলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *