কলকাতা: একুশের বিধানসভা নির্বাচন নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। সেবার মালদা-মুর্শিদাবাদে একটি আসনেও জিততে পারেনি কংগ্রেস। যে ঘটনায় অবাক রাজ্যবাসী। আসলে বিজেপিকে রুখতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একজোট হয়ে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছিলেন। সেই কারণেই বাম-কংগ্রেস গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে খাতা খুলতে পারেনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি তা নয়। এটা রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। তাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে হারানো ভোট আবার কংগ্রেসের দিকে ফিরে আসবে বলে নিশ্চিত দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। সেই সূত্রে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, উত্তর দিনাজপুরের পাশাপাশি বাদুড়িয়া, বসিরহাট, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে কংগ্রেস এবার তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বলাবাহুল্য তৃণমূলও সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে বলে তারাও বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্য রাজনীতিতে একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের নেতামন্ত্রী-সহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। তার ফল দেখা যায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে। এখানকার ৬৫ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু। সেখানে বড় ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী হারিয়ে দেন তৃণমূলকে। যদিও পরে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস দলবদল করে তৃণমূলে যোগদান করেন। কিন্তু তাতে রাতারাতি কংগ্রেসের ভোট তৃণমূলে চলে যাবে, সেটা একেবারেই ঠিক কথা নয়। উল্টে এই দলবদলের ঘটনায় এলাকার মানুষ তৃণমূলের প্রতি আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, এমনটাই খবর।
বাম আমল থেকেই মালদা ও মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত। তৃণমূল জমানাতেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। শুধু ব্যতিক্রম গত বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু এবার হারানো জায়গা ফিরে পেতে বদ্ধপরিকর কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই যে ভোট সমীক্ষা সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদে বাম-কংগ্রেস জোট অত্যন্ত ভাল ফল করতে পারে। মালদাতেও গতবারের থেকে কংগ্রেসের ফল ভাল হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
কংগ্রেসের দাবি মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে তৃণমূল এই দুটি জেলা থেকে মুছে যাবে। তাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদ, মালদা জুড়ে ব্যাপক প্রচার করছেন। এমনকী মুর্শিদাবাদের লাগোয়া জেলা নদিয়ার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলেও কংগ্রেস ভাল ফল করবে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। তবে শুধু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল কেন, গত পঞ্চায়েত ভোটের থেকে সার্বিক ভাবে রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসের ফল ভাল হবে বলে বিধান ভবন মনে করে। বিগত কয়েক মাস ধরে দেখা গিয়েছে জেলায় জেলায় তৃণমূল ছেড়ে হাজার হাজার কর্মী কংগ্রেসে যোগদান করেছেন।
সবার একটাই বক্তব্য, যেভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাতে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এই বিষয়গুলিই ভরসা জোগাচ্ছে হাত শিবিরকে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে কংগ্রেস নতুন করে যে ঘুরে দাঁড়াবে সে বিষয়ে নিশ্চিত দলের কর্মী-সমর্থকরা।