কনটেনমেন্ট জোন নিয়ে বিভ্রান্তি, তালিকা রিভিউ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

কনটেনমেন্ট জোন নিয়ে বিভ্রান্তি, তালিকা রিভিউ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: বুধবার নবান্নে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরও কী কী প্রয়োজন, পরিকাঠামোর কী উন্নতি দরকার, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নিজেও কিছু পরামর্শ দেন তাঁদের।  

এদিন শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা সংক্রমণ বাতাসের মধ্যে দিয়েও নাকি ছড়াচ্ছে৷ এই অবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক পরতেই হবে৷ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিক্যালল কলেজ এক নম্বর হাসপাতাল৷ এখানে অনেক ভালো ভালো চিকিৎসক আছেন৷ অর্ধেক মানুষই মনে করেন এখানে চিকিৎসা করালেই সুস্থ্য হয়ে যাবেন৷ তাঁর পরামর্শ, ডিএমই-র মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বসা উচিত৷ 

মমতা বলেন, ‘‘হাসপাতালে সংক্রমণ হয়ে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ সরকারি-বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালকেই এই বিষয়টি দেখতে হবে৷ আমি ভালো পরিষেবা চাই৷ এর জন্য কী করতে হবে বলুন, চিকিৎসার কাজে সবরকম সাহায্য করব৷’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিডের জন্য জেনারেল হাসপাতালে অনেকে চিকিৎসা পাননি৷ প্রত্যেকের চিকিৎসা করতে হবে৷ অন্য রোগীদেরও সমান গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে৷ সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালকেই এটা দেখতে হবে৷

পাশাপাশি চিকিৎসক ও পুলিশকর্মীদের আরও বেশি করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের সুস্থ্য থাকতে হবে৷ সংক্রমণ রুখতে চিকিৎসকদের বিশেষ শিল্ড ব্যবহারের পরমার্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ চিকিৎসকরা জানান, যে সকল ওয়ার্ডে এসি নেই সেখানে সারা দিন পিপিই পরে কাজ করতে তাঁদের কষ্ট হচ্ছে৷ এই সমস্যা মেটাতে রেস্টরুমে পোর্টেবল এসি বসিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, চিকিৎসকরা ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করুন, বিশ্রাম নিন৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৬০ হাজার আশাকর্মীর জন্য বিশেষ সুতির চাদর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ওই চাদর জড়িয়েই তারা সার্ভে করতে যাচ্ছে৷ ডাক্তারি পড়ুয়াদের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, রাজ্য সরকার সেই বিষয়টি দেখবে বলেও জানান তিনি৷ লকডাউন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু জায়গায় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে ফের লকডাউন করা হয়েছে৷ ৪২ বছরের একজন পুলিশ কর্মীও মারা গিয়েছেন৷ লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে৷ মাস্ক না পরলেই পদক্ষেপ করা হবে৷ কড়াকড়ি করতে জরিমানার ব্যবস্থা করতেই পারি৷ কিন্তু ২০০০ টাকা জরিমানা নিলে সেটা ভালো হবে না৷ এর চেয়ে কেউ যদি মাস্ক না পরে, তাহলে তাঁকে যেন বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ 

কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, সঠিক তথ্য না জেনে খবর করা হচ্ছে৷ কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট করে কনটেনমেন্ট করা হয়েছে৷ ‘এ’ জোন এবং বাফার জোন মিলিয়ে কনটেনমেন্ট করা হয়েছে৷ সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে কনটেনমেন্ট জোনের তালিকা দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপাতত সাতদিন লকডাউন থাকবে৷ পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্টেনমেন্ট জোনের কিছু জায়গায় লকডাউন করতেই হবে৷ এগুলি অত্যন্ত সংকীর্ণ এলাকা৷ তবে দক্ষিণ ২৪ পরগণার তালিকা দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা একটু বেশি করে দেখিয়েছে। সব জায়গার নাম দেখছি। রাস্তা বা ঠিকানা ধরে কন্টেনমেন্ট এলাকা ঠিক করার কথা। এ তো পুরো ওয়ার্ডকেই কন্টেনমেন্ট জোন করে দিয়েছে। কে করেছে এই তালিকা। জেলাশাসক কি সব এলাকা চেনেন? ’’ এরপর মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এই দুই জেলার তালিকা ভাল করে রিভিউ করে তার পর বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।’’  তবে হাওড়া, কলকাতার তালিকায় কোনও সমস্যা নেই বলেই জানান তিনি৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + 3 =