দেবময় ঘোষ: যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির যে তালিকা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে নতুন করে দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গিয়েছে বিজেপির অভ্যন্তরে। যা পরিস্থিতি, তাতে নব্য এবং আদি বিজেপির ফারাক স্পষ্ট। আরও পরিষ্কার ভাবে বললে, দিলীপ-মুকুল শিবিরের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে।
৩০ অগাস্ট এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। পার্টির অভ্যন্তরের সূত্র বলছে, এই নতুন তালিকায় একেবারেই খুশি নন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপ শিবিরের ক্ষোভের মূল কারণ, ওই কমিটিতে মুকুল রায়ের প্রভাব চোখে পড়ার মত। অন্যদিকে, জোর আলোচনা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দাসকে ভাল চোখে দেখছে না মুকুল শিবির। কারণ, প্রকাশ দীর্ঘদিন ধরে দিলীপের ছায়াসঙ্গী। রাজ্য বিজেপি দফতরে যারা যাওয়া আসা করেন, তারা জানেন, দিলীপ প্রকাশকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করেন। দেবজিত সরকার যখন যুবমোর্চার সভাপতি ছিলেন, সেই সময় থেকেই যুব মোর্চায় ছিলেন প্রকাশ।
কিন্তু, অসন্তোষ থাকলেও যুব মোর্চার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি দিলীপ। শোনা গিয়েছে, কলকাতায় বিজেপির হেস্টিংস দফতরে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সরাসরি আপত্তির কথা জানিয়েছেন দিলীপ। তবে, মুখে তিনি বলেছেন, অনেকদিন দেখা হয়নি। তাই, কৈলাসজির সঙ্গে আড্ডা মারতে এসেছিলেন মাত্র। ৩০ অগাস্ট যুব মোর্চার রাজ্য কমিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনা, জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজ্য কমিটিতে ফের পরিবর্তন হবে। কিন্তু, দিলীপের বক্তব্য, পরিবর্তন হবে, এমন কিছুই তিনি জানেন না।
রাজ্য কমিটি পরিবর্তনের বিষয়টি কেন এতটা আলোচিত? সূত্রের খবর, যুব মোর্চার রাজ্য কমিটিতে সাধারণত ৬ জন সহ সভাপতি থাকেন। মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খানের সভাপতিত্বে এই কমিটিতে ৬ জন সহ সভাপতিই রয়েছেন। একইভাবে, এই রাজ্য কমিটিতে পাঁচজন সম্পাদক রয়েছেন। আরও একজন অর্থাৎ মোট ৬ জন সম্পাদকের জায়গা হতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন দুই জন। আরও একজন সাধারণ সম্পাদক হতে পারে বলে বিতর্ক বেঁধেছে। বিজেপি সূত্রের এক অংশ বলছে, উত্তরপ্রদেশের মত বড় রাজ্যে যুব মোর্চার তিন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসন। একে তো ছোট রাজ্য বলা যায়না। বিধানসভা নির্বাচনে আসছে। যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু অন্য মত হল, উত্তর প্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসন। জনসংখ্যা ২৬ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে ১০ কোটি।
আরও পড়ুন: অধিগ্রহণ-প্রযুক্তি জট! মোদীর বুলেট ট্রেন আসতে কমপক্ষে ২০২৮
সমস্যা কোথায়? যুব মোর্চার যে রাজ্য কমিটি হয়েছে, সেই জায়গায় সহ সভাপতি পদে রয়েছেন – অনুপম হাজরা, তাপস ঘোষ, রাজু সরকার, তরুণজ্যোতি তেওয়ারী, সৌগত পাত্র, প্রিয়ঙ্কা তিবরেওয়াল। দিলীপ শিবির মনে করছে এই জায়গায় মুকুল রায়ের প্রভাব স্পষ্ট। তবে, সহ সভাপতি বাকি দুইটি জায়গায় ফের মুকুল ঘনিষ্ঠ কোনও কোনও ব্যাক্তি প্রবেশ করুক, তা একেবারেই চায় না দিলীপ শিবির। সূত্রের খবর, মুকুল শিবির চায় এই কমিটিতে শঙ্কুদেব পণ্ডা'কে চায়। অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদকের পদে দিলীপ ঘনিষ্ট প্রকাশ দাসের জায়গা নিয়েও আপত্তি মুকুল শিবিরের। দিলীপ শিবির যেকোন প্রকারে প্রকাশের অস্তিত্ব রক্ষা করতে মরিয়া। তা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানিয়েছেন দিলীপ।
সূত্রের খবর, সৌমিত্র দিল্লিতে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার কথা হতে পারে।
চলতি জল্পনা, বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করতে যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ'য়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আজ বিকেলে। কিন্তু, তার সঙ্গে কোনও মোটেই যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।