নিজস্ব প্রতিনিধি: আর কয়েক মাস পরেই কাতারে বসবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। কোন দেশ বিশ্বকাপে জয়ী হবে তা নিয়ে চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে তার আগে বাংলায় দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসব কাপের লড়াই। উত্তর না দক্ষিণ, পূর্ব না মধ্য, শহর নাকি জেলা বা শহরতলি, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কোথায় বেশি ভিড় হচ্ছে বা আরও হবে, তা নিয়ে রীতিমতো লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। কে না চায় তাদের পুজোকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি মাতামাতি হোক? আর সেটা চাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু শুধু ভিড়ের নিরিখে প্রতিযোগিতা করেই কি থেমে যাবে পুজো কমিটিগুলি? এছাড়া কি আর কোনও দায়দায়িত্ব তাদের নেই? করোনা আবহের মধ্যে এই প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠছে।
প্রতিবছরই দেখা যায় পুজোর পাশাপাশি উদ্যোক্তারা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান। বস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য বা বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম তাঁদের বিলি করা হয়ে থাকে। নিঃসন্দেহে এটা মহৎ উদ্যোগ। কিন্তু তথ্য বলছে পুজোর জাঁকজমকের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার তুলনায় এই সাহায্যের অঙ্ক অত্যন্ত নগণ্য। সবচেয়ে বড় কথা কলকাতা তথা রাজ্যের প্রত্যেকটি পুজো কমিটি পুজো আয়োজনের পাশাপাশি সমাজসেবায় ব্রতী হয়েছে তা দেখা যায় না। তাই প্রশ্ন শুধু ভিড়ে কেন, কে কত বেশি সমাজসেবা করতে পারল তা নিয়ে কেন প্রতিযোগিতা করা হয় না? যবে থেকে করোনা আছড়ে পড়েছে রাজ্য তথা দেশে, তখন থেকেই গরিব মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বহু মানুষের রোজগার রাতারাতি এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছে। এমনকী অর্থাভাবে অনেককে আত্মহত্যা করতেও দেখা গিয়েছে। তাই সেই সমস্ত বিপন্ন, মলিন মুখের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত আরও বেশি করে বাড়িয়ে দিতে পারে না কী পুজো কমিটিগুলি?
রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছে। অনুদানের শর্ত হিসেবে সমাজসেবার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কতটা নজরদারি থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই দারিদ্রসীমার নীচে যারা রয়েছেন তাঁদের জন্য কি আরও বেশি দরাজ হতে পারেন না উদ্যোক্তারা? সমস্ত পুজো কমিটি এই বিষয়টি নিয়ে একমত হতে পারে না কী যে তারা আগামীদিন থেকে শুধু ভিড় নয়, সমাজসেবার নিরিখে ‘উৎসব কাপ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে? এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই ভাববার সময় এসেছে। তবেই সত্যিকারের দেবীদুর্গার আশীর্বাদ পাওয়া যাবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। স্বামী বিবেকানন্দ কবে বলে গিয়েছেন জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান রয়েছে। তাই অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি পুজো কমিটি জাঁকজমক অনেকটা কমিয়ে যদি সেই অর্থের সাহায্যে সমাজসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে তবে সেটাই হবে রাজ্যবাসীর কাছে বছরের শ্রেষ্ঠ শারদীয়ার উপহার।