কলকাতা: করোনা মহামারীর জেরে ভেঙে পড়েছে সাধারণ জনতার আর্থসামাজিক পরিকাঠামো৷ অনেকে কাজ খুইয়েছেন অথবা কমে গিয়েছে বেতন৷ বেসরকারি দফতরে শুরু হয়েছে ছাঁটাই পর্ব৷ ফলে সিংহভাগ জনতার পকেটে টান পড়েছে৷ সাধারণ জনতার পকেটে টান পড়লেও কিছুই যায় আসে না রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির৷ এই নিয়ে টানা ২০ দিন বাড়ল পেট্রোল-ডিজেলের দাম৷ লাগাতার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে এবার নবান্ন থেকে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের তরফে পেট্রোল-ডিজেল দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে সরব হন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই সময় ভারত সরকার প্রতিনিয়ত দাম বাড়িয়ে চলেছে৷ তার মধ্যে আমার, লজ্জা নেই, কেউ কেউ বলছে, এটা রাজ্যের বিষয়৷ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র, আর দোষ পড়ছে রাজ্যের? মজাই যেন আছেন৷ আপনি বাড়াবেন না, হয়ে গেল৷ আপনি বাড়াবেন কেন? এই সময় মানুষের পক্ষে একটু অসুবিধা হচ্ছে৷ ১০-১৫ দিন ধরে লাগাতার বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ আবার কোথাও কোথাও পেট্রোলের থেকে ডিজেলের দাম বেশি হয়ে যাচ্ছে৷ আমি বুঝতে পারছিনা কি অবস্থা হচ্ছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে যারা পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে, যারা কিনছে, তাহলে তো সমস্যা আছে৷’’
লকডাউন পর্ব কাটিয়ে আনলকের শুরু থেকে টানা ২০ দিন ধরে অব্যহত পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি৷ কলকাতায় আজ পেট্রলের দাম বেড়ে লিটার পিছু দাঁড়িয়েছে ৮১.৮২ টাকা৷ চড়ছে ডিজেল৷ ডিজেল প্রতি লিটার ৭৫.৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে৷ ডিজেলে শেষ ২০ দিনে ৯ টাকা ৭৫ পয়সা লিটার বেড়েছে৷ পেট্রোল বেড়েছে ৯ টাকা ৭৬ পয়সা৷ কিন্তু, জানেন, বর্ধিত জ্বালানি তেল থেকে কতটা আয় হচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের?
দেশজুড়ে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়লেও অপরিশোধিত তেলের দাম বেশ খানিকটা কমেছে৷ ২০১৪ সালে ব্যারেলপিছু অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১০৮ ডলার৷ এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪২ ডলার৷ বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমছে, তখন ভারতে কেন দাম বাড়ছে? এর পেছনে রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বাড়তি মুনাফা৷ জ্বালানি তেলের দামের ওপর ইতিমধ্যেই এক্সাইজ ডিউটি ও সেস নেই কেন্দ্র৷ রাজ্য সরকার তার উপরে ছাপিয়েছে ভ্যাট৷ রয়েছে ডিলার কমিশন৷
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে ডিজেলে সাড়ে ৩ টাকা এক্সাইজ ডিউটি ছিল৷ এখন তা লাফিয়ে বেড়েছে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ টাকা৷ ২০১৪ সালে পেট্রোলে এক্সাইজ ডিউটি ছিল ৯ টাকা ৪০ পয়সা৷ এখন তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকার কাছাকাছি৷ রাজ্য সরকার ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়েছে৷
পেট্রোলের দামের সমীকরণ বলছে, কলকাতায় পেট্রোলের দাম ৮১.৮২ টাকা৷ কিন্তু কেন্দ্র সরকারের এক্সাইজ ডিউটি প্রায় ৩৩ টাকা চাপানো রয়েছে৷ এরপর রয়েছে রাজ্য সরকারের ২৫ শতাংশ হারে ভ্যাট৷ যার মূল্য ১৬ টাকার কাছাকাছি৷ সঙ্গে রয়েছে সেস এক টাকা৷ রয়েছে ডিলার কমিশন বাবদ ৩ টাকা ৩০ পয়সা৷ অর্থাৎ যদি এক্সাইজ ডিউটি, ভ্যাট, সেস, ডিলার কমিশন বাদ দিলে পেট্রোলের দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৯ টাকার কাছাকাছি৷
এক লিটার ডিজেলের দাম এখন ৭৫.৩৪ টাকা৷ কেন্দ্র সরকার ডিজেলের প্রতি লিটারে এক্সাইজ ডিউটি বদবদ তুলে নিচ্ছে ৩২ টাকার কাছাকাছি৷ ডিজেলের উপর ১৭ শতাংশ রাজ্য সরকারের ভ্যাট রয়েছে৷ অর্থাৎ প্রতি লিটার ডিজেল থেকে রাজ্য সরকার নিচ্ছে প্রায় ১০ টাকার কাছাকাছি৷ রয়েছে সেস এক টাকা৷ ডিলার কমিশন ২টাকা ২২ পয়সা৷ এক্ষেত্রে ডিজেলের উপর থেকে এক্সাইজ ডিউটি, সেস, ভ্যাট, কমিশন বাদ দেওয়া গেলে, ডিজেলের দাম কলকাতা লিটার পিছু দাঁড়াতে পারে ৩০ টাকার কিছু বেশি৷ কিন্তু কী আর করবে জনতা? সরকারের মুনাফা বাড়াতে পকেট ফাঁকা হচ্ছে জনতার! বলছেন ভুক্তভোগী জনতা৷
কেন বাড়ছে দাম? করোনা আহবে গত ১৪ মার্চ পেট্রল ও ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক ৩ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার৷ ফের ৬ মে পেট্রলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা ও ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা শুল্ক চাপানো হয়েছে৷ আর তার জেরে এখন জ্বালানি তেলার উপর ৬৯ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷ যা বিশ্বের হিসাবে রেকর্ড৷ পরিসংখ্যান বলছে গত মার্চ থেকে টানা ৮২ দিন জ্বালানির দাম ঘোষণা বন্ধ রাখে কেন্দ্র৷ এরপর আনলক ওয়ান পর্ব থেকে নতুন করে তেলার দাম ঘোষণা শুরু হতেই ফের চড়তে শুরু করেছে দাম৷ দাম বাড়িয়ে শুধু জ্বালানি থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে কেন্দ্র৷ কেন্দ্র-রাজ্যের আয় বৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷