কলকাতা: আফগানিস্তানের দখল তালিবানের হাতে, তছনছ অবস্থা গোটা দেশের, কেউ মরিয়া দেশ ছেড়ে পালাতে, কেউ বা দেশের মধ্যেই আত্মগোপনের জায়গা খুঁজছে, এই পরিস্থিতিতেই সেদেশে আটকে পড়েছেন বহু ভারতীয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলারও অনেক বাসিন্দা। কখনও কোনওমতে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আবার অনেকেই নিকটজনদের খোঁজ পাচ্ছেন না গত দু-তিন দিন ধরে। ফলে বুক চাপা যন্ত্রণই এখন যেন একমাত্র সঙ্গী।
জলপাইগুড়ি জেলার ওদলাবাড়ি বাসিন্দা আমানুল্লা খানের দিদি আটকে রয়েছেন আফগানিস্তানে। আমানুল্লা জানান, বহু বছর আগে তাঁর দিদি বিবি আইসা খানের বিয়ে হয় আফগানিস্তানে। দিদি আফগানিস্তানে এক জন
চিকিৎসক এবং জামাইবাবু হাসপাতালের কমপাউন্ডার। সেদিনের পর ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল দিদির সঙ্গে, দিদি নিজেই জানিয়েছেন, বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁর। বাড়ির বাইরে বেরনোর উপায় নেই। দোকানপাঠ বন্ধ। বাড়িতে খাবার নেই। ভারত সরকারের কাছে আমানুল্লা খানের অনুরোধ, যে কোনওভাবেই হোক দিদির পরিবারকে ফিরিয়ে আনা হোক দেশে৷
আফগানিস্তানে আটকে যখন বাংলার মেয়ে, ঠিক তেমনি দুচোখে পড়াশোনার স্বপ্ন নিয়ে আফগানিস্তান থেকে উড়ে এসেছিলেন মোহাম্মদ তাহের, কিন্তু স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে, ইউনাইটেড নেশানশ হাই কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিদেশি ছাত্র তাহেরকে ভর্তি নেয়নি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়। বছর ঘুরে যায়। তবুও মেলেনি অ্যাডমিশন। মন চাইছে না ফিরতে, লড়াই, যুদ্ধ, গুলিগোলা এসবের মধ্যে যে আর পড়াশোনাটা হবে না তা ভালোই বুঝতে পারছেন তাহের, তবে, চাইলেও ফিরতে পারছেন না দেশে। কারণ গত ১৫ অগস্ট রবিবার আফগানিস্তান দখল করেছে তালিবানরা। তার পর থেকেইতালিবানিদের বন্দুক আফগানিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আফগানিস্তানেই রয়েছে তাহেরের পরিবার। বাড়িতে রয়েছে তার বাবা-মা তিন ভাই ও এক বোন। বাড়ির সঙ্গে বিগত দুই মাস ধরে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছেন না তাহের। কিন্তু কেমন আছেন তারা? সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাঁরা। চাইলেও দেশে ফিরতে পারছেন না। আফগানিস্থানে এ রাজ্যের কত জন আটকে রয়েছেন? তাঁদের ফেরাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে? এপ্রসঙ্গে বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আফগানিস্তান থেকে মানুষকে ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি। এটা একটা বিরাট সমস্যা৷’’
সূত্রের খবর, আফগানিস্থানে কত জন এ রাজ্যের বাসিন্দা আটকে পড়েছেন, তার হিসাব জানতে সব জেলাশাসকদের খোঁজখবরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি প্রশানকে জানান যে, তাঁর আত্মীয় বা পরিবারের লোক আফগানিস্থানে রয়েছেন তবে তাঁর থেকে ওই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, সে দেশে কোথায় থাকেন, পেশা, বা কেন ওই দেশে গিয়েছেন সব বিস্তারিত জানতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সেই তথ্য জেলা প্রশাসন রাজ্য
প্রশাসনকে জানাবে। যা রাজ্য সরকারের তরফে দিল্লির কাছে পেশ করা হবে।