দেশে খাদ্যের মহামারী আসতে চলেছে, আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ‘মন্বন্তর’ দেখছেন মমতা

দেশে খাদ্যের মহামারী আসতে চলেছে, আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ‘মন্বন্তর’ দেখছেন মমতা

 

কলকাতা: গায়ের জোরে কেন্দ্র সরকার কৃষি বিল পাস করিয়ে দিয়েছে৷ করোনার পর এবার খাদ্যে মহামারী আসবে৷ যার জন্য দায়ী থাকবে কেন্দ্র৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এবার পুরোপুরি কেন্দ্র সরকারের উপরে দায় চাপিয়ে নবান্ন থেকে চড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

আজ রাজ্যের প্রশাসনিক সদর কার্যালয় থেকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একেরপর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ একইসঙ্গে নবান্ন থেকেই তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘোষণা করেন তিনি৷ বিজেপি সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা৷

নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের পাস করানো কৃষি বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল মুখ্যমন্ত্রী৷ তৃণমূলের দুই সাংসদ সহ ৮ সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা৷ নবান্ন থেকে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও দোলা সেনের পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ একইসঙ্গে জানান, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকে তৃণমূল পথে নামবে৷

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সংবিধানে কোনও বিল পাস করাতে গেলে কেউ যদি ডিভিশন চাই, তাহলে ডিভিশন দিতে বাধ্য৷ এটাই সংবিধানের নিয়ম৷ কিন্তু কাল কাল বারবার ডিভিশন চাওয়া সত্ত্বেও ডিভিশন না দিয়ে গায়ের জোরে, কৃষকদের পিষে দিয়ে, কৃষকদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে, ক্ষেতমজুরদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিল পাস করিয়েছে কেন্দ্র৷’’ এই বিলের বিরুদ্ধে আগামীকাল থেকে তৃণমূল রাজনীতির ময়দানে নামবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি৷

এরপর উল্লেখযোগ্যভাবে আরও একটি বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বাংলার বাজারে  আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির দায় কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আগামী দিনে খাদ্য মহামারী আসছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্র সরকার কেন পেঁয়াজ ও আলুর উপর থেকে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে৷ পেঁয়াজ-আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী থাকবে বলেও জানিয়ে মমতা৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ আলু-পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে? কারণ যখন মহামারী চলছিল, তখনই এই আইন চালু করেছে কেন্দ্র৷ আলু-পেঁয়াজের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ আর সেই কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ কৃষকরা তাঁদের নিজের জিনিস কোথায় বেচবে? কতগুলি ফোঁড়ে-জোরদার জন্ম দিয়েছে৷ তারা চাষির সব কিছু লুটে নেবে৷ ক্ষেতের সমস্ত জিনিস লুটে নেবে৷ একদিকে মহামারী চলছে করোনা৷ সেই করোনাকে ঠেকাতে পারলো না, আর এখন আরও একটি খাদ্যের মহামারী, খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷’’

বাংলায় বাড়তে থাকা আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য সরকারের তরফ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি৷ উল্টে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম৷ বাংলায় আলুর ফলন হলেও কমেনি দাম৷ আমদানি করা পেঁয়াজেও আগুন৷ কিন্তু, বাংলায় চাষ হওয়া আলুর মূল্য বৃদ্ধির জন্য এবার পুরোপুরি কেন্দ্রকে দায়ী করে কার্যত দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী? নাকি, আগ্নিমূল্য বাজার ব্যবস্থাকে নিয়েও ভোটের বাক্সে ডিভিডেন্ট নেওয়া কৌশল? পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মূলে যদি কেন্দ্রের হাত থাকে, তাহলে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কে? রাজ্য-কেন্দ্রের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে আর কতদিন মহার্ঘ বাজারের জ্বালায় জ্বলতে হবে জনতাকে? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ জনতা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 4 =