cm hikes
নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি কমবেশি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল নিজের মতো করে শুরু করে দিয়েছে। ভোটের লক্ষ্যে কোন কোন প্রকল্পের উপর এখন থেকে জোর দেওয়া উচিত তা নিয়ে সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ চালাচ্ছে। এই আবহের মধ্যেই ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ভাতা বাড়ানো হল পুরোহিতদেরও।
বহুদিন ধরেই দাবি উঠেছিল বাড়াতে হবে ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের ভাতা। সোমবার সেই ভাতা পাঁচশো টাকা করে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন পুরোহিতদের মাসিক ভাতাও পাঁচশো টাকা করে বাড়বে। এর ফলে ইমামদের মাসিক ভাতা বেড়ে হচ্ছে তিন হাজার টাকা। অন্যদিকে মোয়াজ্জেম ও পুরোহিতদের ভাতা বেড়ে হবে দেড় হাজার টাকা। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সভায় যোগ দিয়ে এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য বোর্ড গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। আর তখন থেকেই ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। ইমামরা আড়াই হাজার ও মোয়াজ্জেমরা এক হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন। তাই বিগত কয়েক বছর ধরে সেই ভাতা বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। সেই দাবি মেনেই এবার ভাতার পরিমাণ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল বড় ব্যবধানে হেরে যায় কংগ্রেসের কাছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রে পঁয়ষট্টি শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তাই সেই পরাজয়ের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ে তৃণমূলের। যদিও ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগদান করেন। তবে তাতে তৃণমূলের অস্বস্তি কাটেনি। উল্টে এই বার্তা যায় যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরতে শুরু করেছেন। এরপর পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বেও দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে তৃণমূলকে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে তৃণমূলের সঙ্গে যথেষ্ট টক্কর দিয়েছেন বাম-কংগ্রেসের প্রার্থীরা। যা লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের পক্ষে একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তবে কি সেই কারণেই ইমাম- মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়াতে বাধ্য হলেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। যদিও সোমবার আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন ইমামদের ভাতা কমপক্ষে দশ হাজার ও মোয়াজ্জেমদের আট হাজার টাকা হওয়া উচিত ছিল। তাই এটা স্পষ্ট রাজ্যের উপর বিশাল আর্থিক বোঝা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী এই ভাতা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আর শুধুমাত্র ইমাম- মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়ালে যাতে প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয় সেই কারণে পুরোহিতদেরও ভাতা পাঁচশো টাকা করে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহল মনে করে দু’পক্ষকে ব্যালান্স করার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত। আর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন তার প্রধান কারণ বলেই রাজনীতির কারবারিদের মত। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার কতটা প্রভাব ভোটবাক্সে তৃণমূলের পক্ষে কতটা পড়ে এখন সেটাই দেখার।