কলকাতা:করোনা মোকাবিলার সঙ্গে সঙ্গেই জনজীবনকে ক্রমশ স্বাভাবিক করে তুলতে সোমবার থেকে শুরু হওয়া দেশজোড়া চতুর্থ দফার লক ডাউনে সারাদিনের পরিবর্তে শুধু সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত নাইট কারফিউ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ৩১ মে পর্যন্ত সারা দেশে ‘নাইট কার্ফু’ কার্যকর হবে।উদ্দেশ্য যাতে, পরিষেবা ওএ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে গতি আনার পাশাপাশি অযথা মেলামেশায় লাগাম টানে সংক্রমণে কিছুটা হলেও লাগাম টানা য়ায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এরাজ্যে নাইট কারফিউ জারি করা হচ্ছেনা।রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে লকডাউনের উদ্দেশ্য আরো ব্যহত হল এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পথ পরিস্কার হল বলে বিরোধীদের আশঙ্কা।
সোমবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে দমবন্ধ করে রাখা ঠিক নয়। আমরা সরকারি ভাবে কার্ফু ঘোষণা করছি না। খুব ইমার্জেন্সি ছাড়া কার্ফু বলা যায় না।’
তবে কারফিউ না ঘোষণৈা করলেও ওই সময় মানুষকে বূাড়িতে থাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তবে পুরোদমে লকডাউন চলাকালীনও যেভাবে একাংশের মানুষকে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরোতে , বাজারে ভিড় করতে দেখা গেছে সেখানে শুধুমাত্র মৌখিক আবেদনে কতটা সাড়া মিলবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রাকাশ করেছেন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাইডলাইনে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া রাতে ওই ১২ ঘণ্টার মধ্যে কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। ৬৫ বছরের বেশি এবং ১০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ওই সময়ে বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চাইলে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারাও জারি করতে পারে।সেখানে নাইট কার্ফু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন অবস্থার সমালোচনা করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘এমনি কার্ফু আর নাইট কার্ফুর ফারাক বোঝার বোধ মুখ্যমন্ত্রীর নেই। কেন্দ্রীয় সরকার কার্ফু শব্দটিকে ব্যবহার করে সন্ধের পর লকডাউনকে আরও কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে চেয়েছে। কারণ বাংলা-সহ দেশের প্রায় সব রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে একশ্রেণির উশৃঙ্খল মানুষ সূর্য ডুবলেই জটলা করছেন মহল্লায় মহল্লায়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আরও অক্সিজেন জুগিয়ে দিলেন। আইন ভাঙতে উস্কানি দিলেন।’
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য লকডাউন চালানো হবে। তিনি জানিয়েছেন চতুর্থ পর্যায় এই লক ডাউন এ অর্থনৈতিক কাজকর্মে আরো গতি আনা হবে। এজন্য অন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রকে এই পর্যায়ে ছাড় দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কনটেইনমেন্ট জোনএর সংজ্ঞা বদল করে সংক্রমণের নিরিখে বুথ এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক ভাবে তাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।তিনটি জোন যথাক্রমে – এ অর্থাৎ সংক্রমিত এলাকা , বি অর্থাৎ বাফার জোন এবং সি অর্থাৎ ক্লিন জোন।
২১ তারিখ থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল শুরু করা হবে।এরমধ্যে বি ও সি জোনে ওইদিন থেকে সেলুন-সহ সব দোকান খোলা যাবে। তবে কঠোর ভাবে স্বচ্ছতা ও সামাজিক দূরত্বের নীতি মানতে হবে। ২৭ তারিখ থেকে হকার বাজার খোলার চেষ্টা করা হচ্ছেও বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুরসভা ও পুলিশের যৌথ কমিটি।দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের অনুকরণে জোড় বিজোড় নীতিতেই হকার বাজার খোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে । প্রত্যেক দোকানে স্যানিটাইজার রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।ওই দিন থেকেই দুজন করে যাত্রী নিয়ে অটো চলাচল শুরু হবে।এছাড়াও একদিন অন্তর ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা হবে।দূরত্ববিধি মেনে হোটেল খোলায় সম্মতি দিলেও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন নাইট কারফিউ ঘোষণা করার রাজ্য সরকার তার পক্ষপাতী নয়। তবে সরকারি ভাবে কারফিউ না ঘোষণা করা হলেও লকডাউনের ছাড় ও নিয়ম শিথিল করা হলেও অকারণ জমায়েত হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।