কলকাতা: আমপানের তাণ্ডবে তছনছ বাংলার একাংশ৷ এখনও পর্যন্ত একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ আসছে না খাবার জল৷ ফোনেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ এই অবস্থায় বাড়ছে মানুষের বিক্ষোভ৷ এই বিক্ষোভের মুখেই শনিবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আমি জানি আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে৷ এর জন্য আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি৷ আর না হলে আপনারা আমার মুণ্ডুটা কেটে নিন৷’’
এদিন ক্ষিপ্ত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই কঠিন সময়৷ এর মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকতে হয়েছে৷ সারা দিনই প্রশাসন ব্যস্ত ছিল৷ হাতে সময় পেলাম কোথায়? মাত্র দু’দিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক করা কি সম্ভব? এটা কি এতই সহজ কাজ?
অতীতের প্রসঙ্গ টেনেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে সুনামির পর চেন্নাই দিনের পর দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না৷ খাবার জল ছিল না৷ সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল৷ আয়লার পর কলকাতাও অনেক দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল৷ ফনীর পর দেড় মাস সময় লেগেছিল ওডিশার বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক করতে৷ আমরা জানি আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে৷ এর জন্য আমি হাত জোড় করে ক্ষমতা চাইছি৷ আর না হলে আপনারা আমার মুণ্ডুটা কেটে নিতে পারেন৷ তিনি বলেন, আমরাও মানুষ৷ সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি৷ অমানবিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে আমাদের৷ দিন-রাত জেগে কাজ করছি৷ আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্টের মধ্য রয়েছে৷ ১ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে গিয়েছে৷ কাকদ্বীপে পুকুরের জলের সঙ্গে লবনাক্ত জল মিশে গিয়েছে৷ সেখানে খাবার জলটুকুও নেই৷ তারা কী ভাবে সহ্য করছে? আমাদের টিম তাঁদের পাশে রয়েছে৷
এটা বিশাল বড় একটা বিপর্যয়৷ বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ে আছে৷ পোল ভেঙে গিয়েছে৷ জলের তলায় রাস্তায় চলে গিয়েছে৷ কোথায় কী বোঝা যাচ্ছে না৷ দিন রাত এক করে এক হাজার টিম বাংলায় কাজ করছে৷ পাড়ার ছেলেমেয়াও এগিয়ে এসেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, এই অবস্থাতেও যাঁরা বসে বসে ক্ষুদ্র রাজনীতি করছেন, তাঁদের বলব, এখন এ সব বন্ধ করুন৷ মানুষকে দয়া করে উত্তেজিত করবার চেষ্টা করবেন না৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়লার সময় আমি নিজে ছুটে গিয়েছি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে৷ কিন্তু কারও সমালোচনা করিনি৷ নোট বন্দিই হোক আর ঘর বন্দি, আমরা মানুষের পাশে থেকেছি৷ সমালোচনা করিনি৷
সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ৭ কোটি লোক যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত সেখানে দু’জন কি বলল, তা নিয়ে মাতামাতি বন্ধ করুন৷ আমি মানবিক ভাবেই কাজ করি৷ আমরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি৷ এর মধ্যে কারা বিক্ষোভ করছে সেটা না দেখিয়ে, বরং যাঁরা রাস্তায় নেমে কাজ করছেন তাঁদের দেখান৷
মানুষের কাছে আমার আবেদন, দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন৷ কয়েক লক্ষ পোল পড়ে গিয়েছে৷ শহর কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব সিইএসসি। এটি রাজ্য সরকারের অধীনে নয়, বেসরকারি সংস্থা। বাম আমলে এই দায়িত্ব হস্তান্তর হয়েছিল। সিইএসসি’র মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে৷ মুখ্য সচিবও কথা বলেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ম্যান পাওয়ার কম আছে৷ তা সত্ত্বেও দ্রুত পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
সামনেই ইদ৷ অনেকে কর্মীই বাড়ি চলে গিয়েছে৷ অন্যদিকে, করোনার জেরে সব অফিসেই মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ লোক কাজ করেছেন৷ এই মুহূর্তে এত বড় দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো ম্যান পাওয়ার আমাদের হাতে নেই৷
এছাড়াও ইঞ্জিনিয়র ছাড়া বিদ্যুতের বড় বড় কাজ হয় না৷ বিদ্যুতের তার সবাই জুড়তে করতে পারে না৷ তাহলে নতুন আরও এক দুর্যোগ তৈরি হবে৷ তাও সমস্ত এজেন্সিকে কাজে লাগানো হয়েছে৷ ওডিশা এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকেও অনুরোধ করা হয়েছে৷ ওডিশাও টিম পাঠাচ্ছে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গাছ কাটার জন্য কলকাতাতে মোট ২২৫ টি টিম কাজ করছে৷ সেনাবাহিনীর কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে৷
করোনা সংকটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এত বড় কাজ করা খুবই কঠিন৷ আমরা কেউ ঘুমিয়ে নেই৷ কেরলে এক মাস সময় লাগতে পারে, কিন্তু চার পাঁচ দিনের মধ্য ৭০-৮০ শতাংশ কাজ আমরা করেই দেব৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিকল্প হিসাবে জেনারেটর নেওয়া হচ্ছে৷ সিইএসসি ১৫০ টি জেনারেটর দেবে বলেছে৷ কিন্তু এখনও অধিকাংশ দোকানই খোলেনি৷ তাই এত জেনারেটর তারা জোগার করতে পারবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি৷ তবে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৮০ থেকে ৯০ টা জেনারেটর জোগাড় করে ফেলেছে বলে জানান তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা করোনার থেকেও অনেক বেশি ভয়াভহ৷ এটা জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও ভয়ঙ্কর৷ তিনি জানান, গতকাল ফোন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
দু’দিন পেরই ইদ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বছর আমি নিজে ইদে সামিল হতে পারলাম না৷ আপনারা দয়া করে বাড়িতে বসেই ইদ পালন করুন৷