করোনামুক্ত বাংলা গড়তে নীলনকশা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন জরুরি নির্দেশ

করোনামুক্ত বাংলা গড়তে নীলনকশা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন জরুরি নির্দেশ

কলকাতা:  করোনা প্রতিরোধে নবান্নে জরুরি বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি ও জেলা শাসকদের সঙ্গে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বললেন তিনি৷ ছকে দিলেন করোনা মোকাবিলার নীল নকশা৷

এদিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা নিরন্তর করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন, সেই সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ৫ লক্ষ টাকার বিমা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার৷ সেই মূল্য বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করা হল৷ পাশাপাশি বাড়ানো হল বিমার মেয়াদ৷ ১৫ এপ্রিল থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ মে পর্যন্ত করার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার৷ এই বিমায় আওতায় থাকবেন পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও৷  

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ ছিল, অনেক স্বাস্থ্য কর্মীই নাকি কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই, আগামী দু’মাসের জন্য সেই সকল কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে ১০ হাজার করে দেওয়া হোক৷ পাশাপাশি যাঁরা হাউস স্টাফ হিসাবে কাজ করতে চাইছেন, তাঁদের অবিলম্বে কাজে নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷

তিনি আরও একবার বলেন, করোনা নিয়ে অযথা উদ্বেগ করবেন না৷ যাঁদের ফুসফুসে সমস্যা আছে, যাঁদের হাঁপানি আছে কিংবা কিডনি, হাইপারটেনশন, সুগার বা হার্টের সমস্যা আছে তাঁরা সাবধানে থাকবেন৷ এই সকল ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রয়োজন৷ কোনও ব্যক্তির মাল্টিঅর্গান ফেলিওর হলে কিছু করার থাকে না৷ ক্রনিক নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস থাকলে সমস্য অনেকটাই বাড়ে৷ কিন্তু করোনাকে হারিয়েও সুস্থ হওয়া যায়৷ রাজ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷ ১৪ দিন পর তাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে৷ করোনা রুখতে মেনে চলুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা৷  
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ৩০০টি ভেন্টিলেটরের বরাত দেওয়া হয়েছিল৷ যার মধ্যে ২১০টি সরকারের হাতে এসেছে৷ বাকিগুলিও শীঘ্রই তাঁরা পেয়ে যাবেন৷ এবং আরও ৩০০টি ভেন্টিলেটরের অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ দূরে দূরে হলেও কিছু ভ্রাম্যমান ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার চেষ্টাও করছে রাজ্য সরকার৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা করোনার বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে চলেছেন, সেই সকল চিকিৎসক, নার্স, সাফাই কর্মী সকলের পাশে মানবিকভাব সরকার আছে৷ তাঁদের সব রকম সমস্যায় পাশে রয়েছেন তিনি৷ যুদ্ধ করতে গেলে সবার আগে সুস্থ থাকতে হবেব তাঁদের৷ তিনি বলেন, কেউ যেন খালি পেটে না থাকেন৷ স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে চারবেলা ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার পান, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরই সঁপেছেন৷ পাশাপাশি হাসপাতালগুলিকে ১০০০ সাবান ও হ্যান্ডস্যানেটাইজার পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

এদিন বিভিন্ন জেলা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কোন জেলায় কতগুলি কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন তিনি৷ কোন জালায় কোথায় কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন হবে তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷  এদিন ঝাড়গ্রাম নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানকার আদিবাসী মানুষরা যাতে ঠিক মতো খেয়ে পায় সে দিকে নজর দিতে হবে৷ তাঁদের ভাষায় তাঁদেরকে করোনা সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে৷ আদিবাসী মানুষগুলোর জন্য সবরকমের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন জেলাশাসককে৷

তাঁর সাফ নির্দেশ, কোনও ভাবেই যেন আইসোলেশন ওয়ার্ডের সঙ্গে হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথ এক করা যাবে না৷ প্রবেশ পথ এক থাকলে সংক্রংণের সম্ভাবনাও বহুগুণ বেড়ে যাবে৷ সেইসঙ্গে মেডিসিন সরবারাহ করার ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের হাতে দিয়েছেন তিনি৷ কোনও ভাবেই ওষুধের গাড়ি যাতে আটকানো না হয়, তা দেখতে হবে পুলিশকে৷ কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত মেডিসিন সরবরাহ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *