কলকাতা: করোনা মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে নবান্নে জরুরি বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ছকে নিলেন করোনা মোকাবিলার রণকৌশল৷
এদিন নবান্নে কলকাতার সব বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলিকে বৈঠকে ডাকা হয়। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা এককভাবে সমাধান সম্ভব নয়৷ যৌথভাবে সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে৷ একযোগে কাজ করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে৷ এখন ব্যবসা করার সময় নয়, আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে৷
এদিন স্বল্প সময়ের নোটিশেই নবান্নে হাজির হয়েছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা৷ এজন্য তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুবই গম্ভীর৷ আমাদের যৌথ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে৷ রোগ তো থাকবেই৷ কিন্তু রোগকে ভয় পেলে চলবে না৷ এর প্রতিরোধ করতে হবে৷ আমি বিশ্বাস করি প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর৷ তাই আগাম সতর্কতা নিতে হবে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলিও বহু মানুষকে সেবা দেয়৷ তাদের হাতেও অনেক ডাক্তার আছে৷ প্যাথোলজি ল্যাব, টেস্ট ল্যাব আছে৷ পরিকাঠামো আছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি একযোগে কাজ করার মানসিকতা নিয়েই আজকের এই বৈঠক৷
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে একটি হোয়্যাটস অ্যাপ গ্রুপ খোলার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যে গ্রুপের মাধ্যমে প্রতিদিন বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমারকে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজারহাট ক্যানসার হাসপাতাল এবং রাজারহাটের আরও একটি বিল্ডিংয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড রাখা হয়েছে৷ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উপরে অত্যধিক চাপ পড়ছে৷ এই চাপ কমাতে বাঙ্গুর হাসপাতালে নিউ মাল্টি সুপার বিল্ডিংয়ে ১৫০টি বেডের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি আরজিকর হাসপাতালে যে নাইট শেল্টারটি রয়েছে, সেটিকে হাসপাতালে পরিণত করে আপাতত ৫০টি বেডের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ বাড়ানো হবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আসন সংখ্যাও৷ ২২টি বেড থেকে বাড়িয়ে ১০০টি আয়সোলেশন বেড করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রয়োজনে সেখানে উপস্থিত থাকবে চার থেকে ছ’টা স্যানিটাইজড অ্যাম্বুলেন্স৷ বেলাঘাটা হাসপাতালে থেকে রেফার করা রোগীদের এই অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হবে অন্যত্র৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ৷ এই সময়টা আইন মানব না বা ঝগড়া করার সময় নয়৷ সহযোগিতার সময়৷ মানুষকে রক্ষা করার৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, আপনারা নিজেদের মতো করে আইসোলেশন ওয়ার্ড রাখুন৷ আগামী কয়েকটা সপ্তাহ একটু জটিল৷ আমদের সতর্ক থাকতে হবে৷ যাঁরা বাইরে থেকে ফিরেছেন তাঁদের অবশ্যই কোয়েরেন্টাইনে রাখতে হবে৷
তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য ইতিমধ্যেই ৩০০ ভেন্টিলেশন মেশিন অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে মোবাইল ভেন্টিলেশনও আছে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও এই ব্যবস্থা রাখার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রয়োজনে স্পনসর খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি৷ বরাত দেওয়া হয়েছে ইসিএমও মেশিনের৷ এই মেশিনের সাহায্যে ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলিও যাতে তাদের কাছে এই মেশিন রাখেন সে কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এছাড়াও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ মাস্ক, ৩০ হাজার গ্লাভস, ডাক্তার ও নার্সদের জন্য ২ লক্ষ পিপিই বরাত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ বেসরকরি হাসপাতালগুলির দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নবান্নে উপস্থিত প্রতিটি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের হাতে ১০০টি করে পিপিই ও ১০০টি করে মাস্ক তুলে দেওয়া হবে৷ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুসোর কাছে তাঁর অনুরোধ, চিকিৎসার জন্য কেউ গেলে দয়া করে ফিরিয়ে দেবন না৷ যদি মনে হয় ওই ব্যক্তির কোনও বিশেষ টেস্ট প্রয়োজন তাহলে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করবেন৷
ইতিমধ্যেই কলকাতায় প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। লন্ডন ফেরত তরুণের শরীরে মারণ করোনার ভাইরাস মিলেছে৷ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে ওই তরুণকে৷ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের দুই পড়ুয়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে এনআরএস-এ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন৷ আরও এক ভর্তি সদ্য করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন আরজি করের আইসোলেশন ওয়ার্ডে৷ ক্রমেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস৷