chief minister
নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় এবার সাংবাদিকদের বড় অংশ। বেশিরভাগ সাংবাদিক নাকি ‘তোলাবাজি’ করেন, এমনই গুরুতর অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ঘটনায় সংবাদমাধ্যম জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য সমকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলিতে আলোচনা হয়, যে সমস্ত প্যানেলে অংশ নেন একাধিক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মূলত সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এই ধরনের মিডিয়া ট্রায়াল হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।
তথাকথিত মিডিয়া ট্রায়ালের সমালোচনা মুখ্যমন্ত্রী করতেই পারেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বড় অংশকে কার্যত ‘তোলাবাজ’ বলবেন তিনি? এ কেমন কথা? এ বিষয়ে ঠিক কি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? তিনি বলেছেন, “মিডিয়া ট্রায়ালে বলে দিচ্ছে ওই তো ওর অনেক বন্ধু। আমি বলি যারা লিখছেন তাঁদের পকেটেগুলো যদি একটু খুলতে শুরু করি, তাদের ঘরগুলো যদি আমি রেড করতে শুরু করি, তবে তা করব না, তাঁরা কার থেকে টাকা নিয়ে খবরগুলো লেখেন, সেটা যদি আমরা শুরু করি, তাহলে দেখিয়ে দেব রাজনৈতিক নেতারা একা টাকা কালেকশন করে না। যা সাংবাদিকরা কালেকশন করে। ম্যাক্সিমাম সাংবাদিক, সবাই না হলেও।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভায় এমনটাই বলতে শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। আর এ কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতারা একা টাকা কালেকশন করে না। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলের নাম করেননি তিনি। কিন্তু তাঁর কথাতেই স্পষ্ট রাজনৈতিক নেতারা টাকা কালেকশন করেন। কিন্তু সাংবাদিকদের বড় অংশ টাকা ‘কালেকশন’ অর্থাৎ ‘তোলাবাজি’ করছে, এমন অভিযোগ এই প্রথম শোনা গেল। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে সাম্প্রতিককালে সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলগুলির একাংশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে এমনটা বলেছেন। তবে কি শাসক দলের সমালোচনা করা যাবে না? সেটা করলেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এমনটা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। সংবাদ মাধ্যম সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরে তাদের সঠিক দিশা দেখাবে, সাংবাদিকদের এটা বড় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সেই কারণে সংবাদ মাধ্যমকে গণতন্ত্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ আখ্যা দেওয়া হয়। সেই জায়গা থেকে তৃণমূলের সমালোচনা কোনও সংবাদ মাধ্যম করলে, বা তথাকথিত ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হলে তার বিরুদ্ধে অন্যভাবে প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রী জানাতেই পারতেন। কিন্তু যে ভাষায় তিনি সংবাদ মাধ্যমের বড় অংশকে নিশানা করেছেন, সেটা একেবারেই কাম্য ছিল না তাঁর কাছ থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে নিঃসন্দেহে সমাজে ভুল বার্তা গেল। মুখ্যমন্ত্রী যদি বলতেন সাংবাদিকদের কেউ কেউ টাকা ‘কালেকশন’ করেন, তাহলে বিষয়টি এতটা গুরুতর হয়ে দাঁড়াত না। কারণ সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ অসৎ হতেই পারেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ‘ম্যাক্সিমাম সাংবাদিক’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। যার মানে অন্যরকমই দাঁড়ায়। আর সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে মিডিয়া জগতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?