করোনা: আগামী দু’সপ্তাহ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, নবান্নে চরম হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

করোনা: আগামী দু’সপ্তাহ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, নবান্নে চরম হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা:  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদরে সঙ্গে নিয়ে বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মানুষের কাছে করোনা সম্পর্কে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন চিকিৎসকদের বার্তা৷

এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডা. অভিজিৎ চৌধুরী৷  তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ভাইরাস সংক্রমণের গতি যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে চিন্তায় রয়েছে ভারতও৷ আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আগামী কয়েকদিন এই সমস্যার বাইরে থাকব, এটা ভাবা অত্যন্ত ভুল৷ তবে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ যেটা প্রয়োজন সেটা হল সতর্কতা অবলম্বন করা৷ স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলছে রাজ্য সরকারের প্রতিটি দফতর৷ সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে লড়াই করছি আমরা৷ এই সমস্যা যে আগামী দিনে আরও বাড়বে না তা জোড় গলায় বলা যায় না৷

এর জন্য আমাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ সরকার পাশে আছে৷ তবে আগামী দিনে আরও বড় লড়াই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে৷ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, টিভির পর্দায় সবর্দা একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের বহু মানুষ করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ জীবনে ফিরে অসেছে৷ এই পজেটিভ দিকটিকেও দেখতে হবে৷ তিনি স্বীকার করে নেন, সারা দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামের একটা সংকট রয়েছে৷ ডা. চৌধুরী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার৷ এই সমস্যা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, গোটা ভারতের চিত্রই এক৷

স্বাস্থ্য দফতরে মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে চিকিৎসার একটা  রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে৷ পাশাপাশি জেলার হাসপাতালগুলিতে কী নিয়ম মেনে চিকিৎসা হবে, সেটাও ঠিক করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, করোনা সম্পর্কে সেলফ রিপোর্টিং এর জন্য সরকার একটা অ্যাপ তৈরি করছে৷ কিছুদিনের মধ্যেই তা মানুষের হাতে পৌঁছে যাবে৷

এর পর কথা বলেন ডা. সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, এটা সত্যি কঠিন সময়৷ ভারত এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্টেজে রয়েছে৷ তৃতীয় স্টেজে পৌঁছলে পরিস্থিতি ভয়ানক হবে৷ সাম্প্রদায়িক সংক্রমণ ঘটবে৷ এই অসুখের উল্লেখযোগ্য দিকই হল সংক্রমণ৷ এই ভাইরাস মূলত হাঁচি বা কাশির সঙ্গে নির্গত ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়৷ এই ড্রপলেট চেয়ার-টেবিল বা মেটালের উপরও পড়তে পারে৷ সেখানে স্পর্শ করলেই সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হবে৷ এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল ডিস্টেনসিং বা সামাজিক দূরত্ব৷ লকডাউনকে সফল করতেই হবে৷  না হলে এই ভাইরাসের চেন ব্রেক করা সম্ভব হবে না৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশও আরও একবার মানুষের সামনে তুলে ধরেন তিনি৷

ডা. বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের ২২টি জেলায় যে সকল সেন্টার রয়েছে, সেই সেন্টারগুলিতে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগী এলে কী ভাবে চিকিৎসা হবে ছকে দেওয়া হয়েছে সেই গাউডলাইনও৷
তিনি আরও বলেন, ৫৫ বা ৬০ পেরনো মানুষই করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েডের ভূমিকা নেই৷ চিকিৎসার আগে তাই সতর্ক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি৷

চিকিৎসকদের সঙ্গে সুর মিলিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ এই ১৭ জনই চারটে পরিবারের সদস্য৷ অর্থাৎ এই রোগ কতটা ছোঁয়াচে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়৷ নিজেকে এবং সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখুন৷ সন্দেহ হলে নিজেদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখুন৷ বাজারে গেলেও দূরত্ব বজায় রাখুন৷ আগুন নিয়ে খেলবেন না৷ আগামী ২-৩ সপ্তাহ খুব খুব জটিল৷

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই কয়েকদিনের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৩৯৪ পিপিই দেওয়া হয়েছে৷ ৪২ হাজার ২৯৬ এন ৯৫ মাস্ক এবং  ১৮ হাজার ৩৬৩টি স্যানিটাইজার দেওয়া হবা৷ ভবিষ্যতে আরও দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক রাজ্যে বেতন হয়নি৷ অনেক রাজ্যে অর্ধেক বেতন হয়েছে৷ আমরা কষ্টের মধ্যেও কর্মীদের পুরো বেতন দিয়েছি৷ আপনারা সরকারকে সহযোগিতা করুন৷ বাড়িতে থাকুন৷ প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাচ্ছে৷ হোম ডেলিভারির সুযোগও দেওয়া হয়েছে৷ খাদ্য সাথীতে যাঁরা ২ টাকা দরে চাল পেতেন, তাঁদের ছ’ মাস বিনা পয়সায় চাল দেওয়া হবে৷ আপনারা শুধু সতর্ক থাকুন৷ এটা আড্ডা মারার সময় নয়৷

য়াঁরা রাজ্য তহবিলে অনুদান দিয়েছেন এদিন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ এই বিপর্যয় মোকাবিলায় ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রিলিফ ফান্ডে সামর্থ মতো অনুদান দেওয়ার আর্জিও জানান তিনি৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *