কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছত্রধর মাহাতো মামলায় নয়া মোড়! ছত্রধরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে কলকাতা হাইকোর্টে মরিয়া চেষ্টা জাতীয় তদন্তকারি সংস্থার NIA-এর৷ ইতিমধ্যেই NIA-এর করা ছত্রধর মাহাতর বিরুদ্ধে মামলায় নিম্ন আদালতে সমস্ত নথি চেয়ে পাঠিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ আগামীকাল ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের যাবতীয় নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷
গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর এনআইয়ের বিশেষ আদালতে ছত্রধর মাহাতো সহ ৫ জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাঁরা। ২০০৯ সালে রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণ এবং ২০০৭ সিপিআইএম নেতা প্রবীর মাহাতো খুনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান৷ গতবছর ২২ অক্টোবর এনআইয়ের বিশেষ আদালত নির্দেশ দেন, যেহেতু ঝাড়গ্রাম নিম্ন আদালতে তাদের জামিন মঞ্জুর করেছিল, তাই ছত্রধর মাহাতো এবং ৫ অভিযুক্তের জামিন খারিজের জন্য NIAকে সেখানেই আবেদন করতে হবে৷ হাইকোর্টের বেশ কয়েকটি এজলাস ঘুরে বর্তমানে মামলার শুনানি শুরু হয় প্রধান বিচারপতি টি ভি রাধাকৃষ্ণান ও বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চে৷
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী দেবাশীষ রায় আদালতে মামলার যৌক্তিকথা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানান, ২০০৭ সালে সিপিআইএম নেতা প্রবীর মাহাতো খুন হন৷ তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে (৩০২/১২৩) ধারায় খুন এবং দেশদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়৷ যার সর্বোচ্চ সাজা আমৃত্যু কারাবাস৷ ১৩ বছর বাদে ছত্রধর মাহাতো সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ( UAPA) ধারা যোগ করার কারণ কী? যদিও NIA পক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টে দাবি করেন, তাঁদের আইন অনুযায়ী এনআইএ মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হতে পারে না। মূলত এনআইএর বিশেষ আদালত এবং হাইকোর্ট দেখবে৷ হাইকোর্ট অবিলম্বে ছত্রধর মাহাতো জামিন খারিজ করা হোক বলে দাবি জানানো হয়৷
২০০৯ সালের কাঁটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় গত বছর ১৯ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের তরফে ছত্রধরের যাবজ্জীবনের সাজা কমিয়ে ১০ বছর হয়েছিল৷ দীর্ঘ আইনি জট কাটিয়ে প্রায় এক দশক পর গতবছর ফেব্রুয়ারিতে জেল থেকে মুক্তি পান জঙ্গলমহলের অবিসংবাদী নেতা ছত্রধর৷ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ছত্রধরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিল তৃণমূল৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল৷ তখন শুরু হয়েছিল জল্পনা৷ এরপর সরাসরি তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে চলে নাম তুলে নেন অবিসংবাদী নেতা ছত্রধর৷ গত ২০১৫ সালে ইউএপিএ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ মেদিনীপুর আদালতের তরফে ছত্রধর, সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন ও সাগেন মুর্মুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর প্রিজন ভ্যানে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ছত্রধর৷ পরিবর্তনের আমলে জঙ্গলমহলের আন্দোলন পর্বে ছত্রধরের পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই মঞ্চে দু’জন করেছিলেন একাধিক সভা৷ মমতা তখন বিরোধী নেত্রী৷ সে কথা মনে করিয়ে আদালত চত্বরে ছত্রধর জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এখন ক্ষমতায়৷ আমাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতিও দিয়েছিল তৃণমূল৷ অথচ, সেই আন্দোলনের জন্যই আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা করা হয়েছে৷ তৃণমূলকে নিয়ে আন্দোলন করার পর সেই ‘বন্ধু’ ছত্রধরের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রদোহী মামলা দেওয়া ও পরে গ্রেপ্তারির ঘটনায় বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুল পারেন জনগণের কমিটির নেতা৷