মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে মানুষের কাজ করতে চান চন্দনা-মনোরঞ্জন

মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে মানুষের কাজ করতে চান চন্দনা-মনোরঞ্জন

কলকাতা: অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাঁর৷ স্বামী সন্তানদের নিয়ে দিন কাটে টালির চালা ঘরে৷ আর অন্যজনের ছেলেবেলা কেটেছে ফুটপাতে৷ কখনও রিক্সার প্যাডেল টেনে৷ কখনও বা রান্না করে৷ একুশের নির্বাচনে তাঁদেরই বেছে নিয়েছে বাংলার মানুষ৷ একজন শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি৷ অন্যজন হুগলী বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী৷ 

আরও পড়ুন- অভিযোগ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে, নারদ মামলার শুনানি উত্তেজনায় পূর্ণ

রাজ্যের দরিদ্র বিধায়কদের অন্যতম চন্দনা বাউড়ি৷ চন্দনার স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি৷ দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ৷ অত্যন্ত অভাবের সংসার৷ তাঁর ঘরের চালে রোদ-বৃষ্টির অবাধ আনাগোনা৷ ঘরে একটা টিভিও নেই৷ এখনও বালতি করে দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয় তাঁকে৷ প্রথমবার যখন জানতে পারেন মাসে কত বেতন পাবেন, তা শুনে হতবাকই হয়েছিলেন চন্দনা৷ বেতন-ভাতা মিলে মাস গেলে ৮২ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে শুনে খানিক অবাক সুরেই বলেছিলেন, ‘‘অত্ত টাকা মাইনে পাব?’’ বলেছিলেন এই টাকা দিয়ে মানুষের কাজই করতে চান তিনি৷ নিজের জন্য গাড়ি কেনার দরকার নেই তাঁর৷ কারণ তিনি যেখানেই যান, বাইকে করে পৌঁছে দেন তাঁর স্বামী৷ ভোটের আগে কেনা মোবাইলেই দেখে নেন টিভি৷ তাই টিভি’রও দরকার নেই৷ শুধু কী ভাবে মানুষের কাজ করা যায় তা ভাবতেই ব্যস্ত শালতোড়ার বিধায়ক৷   

অন্যদিকে রয়েছেন দলিত লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী৷ পেটের দায়ে এক সময় রিক্সা চালিয়েছেন তিনি৷ করেছেন রাঁধুনির কাজ৷ মাঝ বয়সে সাক্ষর হন৷ মহাশ্বেতা দেবীর হাত ধরে প্রবেশ করেন সাহিত্যের আঙিনায়৷ তার পর  ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন, অন্য ভুবন, জিজীবিষার গল্প প্রভৃতি গ্রন্থে উঠে এসেছে তাঁর দলিত জীবনের কাহিনী৷ এবারের ভোটে বলাগড় থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছেন মনোরঞ্জনবাবু৷ মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন গামছা গলায় রিক্সা চালিয়ে৷ আর ভোটে জিতে একটি টোটো কিনেছেন তিনি৷ এই টোটো নিয়েই তিনি পৌঁছে যাবেন মানুষের কাছে৷ গরিব এলাকায় যেখানে মানুষ দু’মুঠো পেট ভরে খেতে পায় না, সেখানে গাড়ি চেপে যেতে সঙ্কোচ হয় তাঁর৷ এলাকায় যাঁর যখন প্রয়োজন ডাকলেই পৌঁছে যান তিনি৷ টোটো কেনার পর চালকের আসনে বসে ছবি পোস্ট করেছিন মনোরঞ্জনবাবু৷ ক্যাপশনে লেখেন, ‘‘আপনাদের বিধায়ক, আপনাদের সেবক৷ এতদিনে আপনাদের আশীর্বাদে, দয়া আর দানে নিজের একটা বাহন হল৷ যে কোনও দিন, যে কোনও সময় এই বাহন বিধায়ককে নিয়ে পৌঁছে যাবে আপনার দরজায়৷’’ 

আরও পড়ুন- প্রতিশ্রুতি রাখলেন মমতা, সূচনা হল ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের

মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে রাজনীতিতে আসা এই দুই নেতাকে কুর্নিশ৷ তাঁদের রাজনৈতিক রং হয়োত আলাদা৷ কিন্তু দু’জনেই চান মানুষের কাজ করতে৷ বাঁচতে চান মানুষের জন্যে৷    
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 4 =