কলকাতা: রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে উঠল বিস্ফোরক দাবি৷ কমিশনে চলছে বেআইনি কাজ৷ এই মর্মেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠালেন খোদ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত৷
আরও পড়ুন- সফল হয়েও মেলেনি রেজিস্ট্রেশন, নবান্নে দরজায় ধর্না বিক্ষুব্ধ নার্সিং স্টাফদের
দু’পাতার ওই চিঠিতে চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘যে ভাবে মানবাধিকার কমিশনের কাজ চলছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷’’ তৃণমূল জমানায় কমিশন যে তার গুরুত্ব হারিয়েছে, এর আগে একাধিকবার সেই অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির৷ এবার কমিশনের চেয়ারম্যানের গলাতেও শোনা গেল একই সুর৷ ওই চিঠিতে গিরিশবাবু বলেন, ‘‘গত চার-পাঁচ বছর ধরে কোনও সহকারী নেই৷ কমিশনের উপসচিবের পদও দু’বছর ফাঁকা পড়েছিল৷ গত ছ’মাস ধরে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে৷ সম্বল বলতে শুধু এডিজি এবং এসপি-পদ৷’’
শুধু শূন্য পদ নয়, গিরিশবাবু আরও বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার কমিশনের এসপি স্বাতী বাঙ্গালিয়াকে এডিজি পদের চার্জ দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু উনি কাউকে কিছু না জানিয়ে আচমকাই কলকাতা পুলিশে যোগ দেন৷ কী ভাবে চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া এই বদলি হল সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷ একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছেও জবাব তলব করেছেন গিরিশবাবু৷ তাঁর অভিযোগ, নিজেদের ইচ্ছামতো কমিশনে লোক পাঠায় নবান্ন৷ সেই কর্মীরা যখন কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠেন, তখনই তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়৷ এর জন্য কোনও রকম আলোচনার প্রয়োজনীয়তাও কেউ বোধ করে না৷
আরও পড়ুন- শনিবার পর্যন্ত ব্যপক বৃষ্টিতে ভাসতে পারে ৫ জেলা, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে
কমিশনের কর্মীদের মানসিকতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের৷ তাঁর কথায় এক শ্রেণির কর্মীর কাজের প্রতি কোনও নিষ্ঠা নেই৷ মাসের শেষে বেতন পেলেই হল৷ কমিশনের কর্মীদের এই গা ছাড়া মনোভাবের উদাহরণও দিয়েছেন তিনি৷ গিরিশবাবু বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে জমা পড়া অভিযোগ আট-ন’ মাস পরেও কমিশনের খাতায় ওঠে না৷ গোটা বিষয়টি ‘অ্যাক্ট অফ কনটেম্পট’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ চিঠি পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যকে জবাব দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত৷
রাজ্য সরকারের কাছে এই চিঠি পাঠানোর পর কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকারের চোখে কমিশন যে গুরুত্ব হারিয়েছে, এই চিঠিতেই তা স্পষ্ট৷ এর ফলে সাধারণ মানুষের আস্থাও হারিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, আমরা এক সময় মানুষের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছিলাম৷ এখনও তা আর নেই৷ সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য যে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছিল, রাজ্য সরকার তার যথাযথ মর্যাদা দেবে বলে আশা রাখব৷