central leadership
নিজস্ব প্রতিনিধি: ইস বার দোশো পার! এই স্লোগান নিয়মিত দিতেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে কার্যত ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে দেখা গিয়েছিল। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা কতবার যে প্রচারের জন্য বাংলায় এসেছিলেন তা গুণে শেষ করা যাবে না। তার ফল কি হয়েছিল সেটা আজ সবারই জানা। দুশো অর্থাৎ ডাবল সেঞ্চুরি তো দূরের কথা, একশোর ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। তবে ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে, আর সেটা করে দেখিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অনেকেই মনে করেন একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব যদি এতটা প্রচারে না আসতেন তাহলে হয়ত বিজেপির ফলাফল আরেকটু ভাল হতো। তবে সেই ঘটনা থেকে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব কতটা শিক্ষা নিয়েছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ বাংলার দুর্গাপুজোয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি দিয়ে লোকসভার প্রচার এখন থেকেই শুরু করে দিতে চাইছে বিজেপি। রাজ্যকে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফে যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে চন্দ্রযান-৩, জি-২০ সম্মেলনের সাফল্যের পাশাপাশি রান্নার গ্যাসের দাম কমিয়ে দেওয়ার মতো ইস্যুগুলিকে তুলে ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাফল্য হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে রাজ্য জুড়ে। আর প্রতিটি হোর্ডিংয়ে বড় করে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রীর ছবি। অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনে ‘প্রধানমন্ত্রী পার করেগা’, এটাই প্রত্যাশা বঙ্গ ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের। আর সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই যদি রাজ্যকে মোদি-ময় করে তুলতে চায় বঙ্গ বিজেপি, তাতে দল একুশের মতো আবার বড় ধাক্কা খাবে না তো?
নির্বাচনে সাফল্য পেতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন প্রত্যেকটি বুথে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা। ‘আমার বুথ সবচেয়ে শক্তিশালী’, এই স্লোগান সামনে রেখে বহুদিন ধরেই দেশজুড়ে প্রচার করছে বিজেপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেক বুথে তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। মূলত পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথগুলিতে বিজেপির সংগঠন নেই বললেই চলে। সেই জায়গা থেকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে প্রচার করলেই লোকসভায় আবার গতবারের মতো সাফল্য আসবে, এটা ধরে নিলে ভুল হবে। কারণ গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য বিজেপির ক্রমশ শক্তিক্ষয় হয়েছে। লোকসভা বা বিধানসভা, একটি উপনির্বাচনেও জিততে পারেনি বিজেপি। একশোর বেশি পুরসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির গড় বলে পরিচিত যে সমস্ত অঞ্চল রয়েছে, সেখানেও ফলাফল খুব খারাপ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ধূপগুড়ি বিধানসভাও উপনির্বাচনে বিজেপি ধরে রাখতে পারেনি। রাজ্য বিজেপির হাল কতটা খারাপ হয়েছে তা এগুলি থেকেই পরিষ্কার। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিলেই যে সমস্যার সমাধান হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তবু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে রাজ্য বিজেপি। তা ভোট বাক্সে তাঁদের আদৌ ডিভিডেন্ড দেবে কিনা সেটাই এখন দেখার।