কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চালাকি করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন? নাম কা ওয়াস্তে নির্বাচন?

কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চালাকি করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন? নাম কা ওয়াস্তে নির্বাচন?

কলকাতা: কথায় বলে দুর্যোধনের ছলের অভাব নেই। সেটা প্রতি মুহূর্তে প্রমাণ করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হবে। তার মানে কি এটাই দাঁড়ায় যে মাত্র এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে জেলায় জেলায়? সেটাই কিন্তু করতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে জেলা পিছু মাত্র এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এমনটাই জানানো হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে জেলা পিছু এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার কি ভিত্তি রয়েছে? এত কম সংখ্যক বাহিনী দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে? উল্লেখ্য কমিশন সূত্রে দাবি করা হয়েছে গোটা রাজ্যে মাত্র ১৮৯টি অতি স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে। তাই বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। সেই কারণেই জেলা পিছু মাত্র এক কোম্পানি করে বাহিনী চাওয়া হয়েছে। যা দেখে হতবাক রাজনৈতিক মহল।

রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন এভাবে আসলে পিছনের দরজা দিয়ে হেঁটে পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য পুলিশ দিয়েই করাতে চায় কমিশন। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশন মানল না, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু নিরাপত্তায় কার্যত মোতায়েন করা থাকবে রাজ্য পুলিশের কর্মী। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে পাল্টা পদক্ষেপ করতে চলেছে বিরোধীরা। প্রয়োজনে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে বিরোধীরা, এমনটাই সূত্রের খবর।

বিরোধীদের দাবি, রাজ্যের প্রায় সমস্ত বুথই স্পর্শকাতর। ৬০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। সেখানে জেলা পিছু শুধুমাত্র এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী অর্থাৎ একশো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান দিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নিরাপত্তা বজায় রাখা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

বিরোধীদের অভিযোগ এভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন চালাকি করছে। অর্থাৎ কমিশন ঠিক করে নিয়েছে কোনও ভাবেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঞ্চায়েত নির্বাচন করবে না তারা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে রাজ্য সরকারের নির্দেশেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই চালাকি করছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করাতে কেন এত ভয় পাচ্ছে নবান্ন তথা রাজ্য নির্বাচন কমিশন? তবে কি গ্রাম বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারলে তৃণমূলের রাজপাট ধ্বংস হয়ে যাবে? তার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় যদি সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় তাহলে ভরাডুবির ভয় পাচ্ছে তৃণমূল?  তাই বিরোধীরা ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

বিরোধীদের অভিযোগ, নবান্ন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন হাতে হাত মিলিয়ে রীতিমতো ছলচাতুরি করে এই ফন্দি এঁটেছে। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে বাংলার মানুষ সবটাই বুঝতে পারছেন। এতে যে তৃণমূলের কতটা অস্বস্তি বাড়ছে সেটা কি বুঝতে পারছেন না শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব? নাকি সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে বসে আছেন? এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =