বালুরঘাট: দেবী নয় মানবীসত্ত্বার আবাহন। শাস্ত্রে পুরাণে নারীকে দেবীরূপে বন্দনা করা হলেও ভারতীয় সমাজ কোনওদিনও মেয়েদের সেভাবে সমাজে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। মেয়েরা চিরকাল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে লোকসানের অংশ, পরধন। ফলে পরের জিনিস নিজের কাছে রাখলে কখনও কী তার যত্ন হয়। অতএব মা-বাবা হোক বা শ্বশুরবাড়ির লোক সারাজীবন পরের জিনিস এই নামের তকমা তাদের ঘোঁচে না।
তবে দিনকাল বদলাচ্ছে মেয়েদের অবস্থানও বদলাচ্ছে কিছু কিছু করে। তাই বলে লোকসানের ভাবনা থেকে এখনও বেরোতে পারেনি সমাজ। অশিক্ষিত সমাজ তো বটেই তথাকথিত শিক্ষিত সমাজেও বেআইনীভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রূণ হত্যা চলছে অহরহ। জন্মে কিংবা না জন্মেই বহু কন্যার স্থান হয় ডাস্টবিনে।
তবে যারা এই ধারণার উর্ধে উঠে অন্যরকম ভাবতে পারেন তারা অবশ্য কন্যাসন্তানের জন্মে দুঃখের সাগরে ডুবে যান না। বালুরঘাটের প্রমিত লাহার মত মেতে ওঠেন আনন্দে। তাঁর মতই পালন করেন কন্যার জন্মে আগমণী উৎসব। এক বেসরকারী ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক প্রমিতবাবু কন্যার জন্মের আনন্দে নিজের ল্যাবের সব পরীক্ষা বিনামূল্যে করে দিয়েছেন এই দিনটির জন্য। তাঁর দাবি প্রতিদিন তাঁর ল্যাবে প্রায় ১০০ রোগী আসেন, তাঁর আয়ও হয় প্রচুর কিন্তু কন্যার জন্মকে উদযাপন করতে তার পরোয়া করছেন না তিনি।
কন্যাসন্তান লাভের আনন্দ ভাগ করে নিতে প্রমিত বাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে আসা রোগীর পরিবার থেকে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই। শুধু তার ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলিতেই নয় প্রমিতবাবু অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পরিষেবাগুলির সব কিছুই আজ তিনি বিনামূল্যে প্রদান করছেন বলে জানিয়েছেন।
আজও যখন হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন রাজ্যের কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে চলেছে ঠিক তখনই বাংলায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাংলাদেশ লাগোয়া শহর বালুরঘাটের এই ব্যবসায়ী যেভাবে কন্যা জন্মানোর আনন্দে মেতে উঠেছেন তা সাধুবাদ আদায় করে নিতেই পারে।