কলকাতা: গরু পাচার চক্রের তদন্তে নেমে এবার দিল্লি থেকে এনামুল হককে গ্রেফতার করল সিবিআই৷ এই এনামুল হকের হাত ধরে বাংলাজুড়ে চলল গোরু পাচারের কারবার৷ বিএসএফ থেকে কাস্টমসের একাংশকে নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন এনামুল৷
গরুপাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুলের সন্ধানে বৃহস্পতিবার দিনভর কলকাতা-সহ বিধাননগরে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা৷ পরে আজ শুক্রবার দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় গরুপাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুলকে৷ ধৃতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে৷ গত সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পর অবশেষে সফল সিবিআই৷ গরু পাচার চক্রের তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের প্রথম থেকেই নজরে ছিল এনামুল৷ তদন্তে উঠে আসে একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের নাম৷ তাঁদের জেরা করে মেলে এনামুলের সন্ধান৷ পরে দিল্লি থেকে এনামুলকে গ্রেফতার করে সিবিআই৷ আজই ধৃতকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে বলে সিবিআই সূত্রে খবর৷ ধৃতকে জেরা করে পাচার চক্রের জাল গোটাতে পারে সিবিআই৷ উঠে আসতে পারে বহু প্রভাবশালীর নাম৷
গরু পাচারের তদন্তে নেমে একদিকে যেমন জঙ্গি যোগের সন্ধান মিলিছে, ঠিক তেমন সিবিআই নজরে রয়েছে ১২ বিএসএফ ও কাস্টমস অফিসার৷ সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী যোগাযোগ৷ সিবিআই নজরে এনামুল হকের সাম্রাজ্য! ভারত-বাংলাদেশে মামা-ভাগ্নের কাহিনী ভাবাচ্ছে সিবিআইকে৷ শুধুমাত্র বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার বা জিবু টি ম্যাথুই নয়, পাচারচক্রের পিছনে রয়েছে এনামুল হকের বিরাট সাম্রাজ্য! তদন্তে নেমে কাস্টমস ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক ডজন অফিসারের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে সিবিআই৷ সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে গেরু পাচারপর্বে এনামুলকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠছে ১২ বিএসএফ আধিকারিক ও একাধিক কাস্টমস অফিসারের বিরুদ্ধে৷ বিনিময়ে এনামুল হক তাঁদের নিয়মিত মোটা টাকা দিতে বলে জানতে পারেছেন আধিকারিকরা৷
সিবিআই সূত্রে খবর, ৫ কাস্টমস অফিসার ও ৭ জন বিএসএফে কর্মরত আধিকারিক সরাসরি এনামুল হকের সাম্রাজ্য বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকতে পারেন৷ যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বদলি হয়েছিলেন বলে খবক৷ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এনামুলকে সাহায্য করে যে টাকা মিলত, তা দিয়ে অনেকেই সম্পত্তি বাড়িয়েছেন৷ সেই সমস্ত সম্পত্তির পরিমাণ ও অর্থমূল্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে বলে খবর৷ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে খবর৷
সিবিআই ১২ জন ‘এনামুল সহযোগী’ আধিকারিকের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জোগাড়ের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে৷ সূত্রের খবর, এনামুলের কারবারে সাহায্য করলে গরু পিছু বিএসএফ আধিকারিকদের উপহার দেওয়া হত ২ হাজার টাকা৷ অকশনে গরু পিছু ৫০০ টাকা ও ১০ শতাংশ বরাদ্দ কমিশন যেত ছিল কাস্টমস আধিকারিকদের জন্য৷ পথঘাট সাফ রাখতে প্রভাবশালীদেরও বখরা দেওয়া হত হবে খবর৷ সেখানে রাজনৈতিক দলের কোনও নেতা সুবিধা পেতেন কি না, তা জানতে ইতিমধ্যেই সিবিআই খোঁজখবর শুরু করেছে সূত্রের খবর৷ গোটা পাচার চক্রের পিছনে জঙ্গিসংগঠনের হাত থাকতে পারে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন সিবিআই আধিকারিকরা৷
সিবিআইয়ের ‘স্ক্যানারে’ রয়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদহের ৬ কাস্টমস আধিকারিক, বিএসএফের ২০, ৩৬, ৮৩ নম্বর সহ আরও কয়েকটি ব্যাটালিয়নের অফিসার থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের দু’জন কর্তারও৷ মুর্শিদাবাদের লালগোলা ও মালদহের কালিয়াচকের ২ জন আধিকারিককে ভূমিকাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে৷ এনামুলের ২ শাগরেদ আনারুল ও গোলাম মুস্তাফা, বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমার ও তাঁর ছেলে ভুবন ভাস্করের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই৷
সিবিআই জানতে পেরেছে, গরু পাচারে কাঁটাতারের এপারে দাপট ছিল মামার৷ ওপারে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা ছিল ভাগ্নের৷ গরু পাচার থেকে জালনোট, মাদক কারবার, কোনওকিছুই বাদ ছিল না মামা-ভাগ্নের সাম্রাজ্যে৷ মুর্শিদাবাদের এনামুলের বিভিন্ন ডেরায় সিবিআই হানা দেওয়ার পর লোকের মুখে ঘুরছে মামা-ভাগ্নের কাহিনী৷ তবে, সাম্রাজ্য বিস্তারে মামা-ভাগ্নের যুদ্ধও দেখেছে মুর্শিদাবাদ৷ মামার কারবার দেখার ভারছিল ভাগ্নের উপর৷ ধীরে ধীরে মামাকে ফাঁকি দিয়ে ভাগ্নে নিজের সাম্রাজ্য বাড়াতে চেষ্টা করেন৷ মামা এনামুলের রোষে পড়ে ভাগ্নে৷ মামার চালে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় ভাগ্নে৷ প্রথমে সৌদি, পরে বাংলাদেশের ঘাঁটি তৈরি করে ভাগ্নে৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার নিয়ন্ত্রণ করত ভাগ্নে৷ গরুর পাশাপাশি নেশার সামগ্রীর কারবার শুরু হয়৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভাগ্নের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে৷ সেই থেকে গা-ঢাকা দিয়ে রেখেছে এনামুলের ভাগ্নে৷