কলকাতা: সব জল্পনা উড়িয়ে অবশেষে কলকাতা পুর নিগমের মুখ্য প্রশাসক পদে বসলেন ফিরহাদ হাকিম। বুধবার প্রকাশিত হল বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বিজ্ঞপ্তি। এদিন কলকাতা পুর নিগম আইনের ১৫৪ ধারার রিমুভ্যাল অফ ডিফিকাল্টিস অ্যাক্ট প্রয়োগ করে ফিরহাদ হাকিম-সহ মেয়র পারিষদদের এই বোর্ডে নিযুক্ত করা হয়৷ সাধারণত এই ধরনের কর্মিটি একলপ্তে ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব সামলাতে পারে না। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করেই নির্বাচন পরবর্তী বোর্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই বোর্ডকে সক্রিয় রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে৷ আজ, বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে শেষ হচ্ছে বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ৷ তারপর শুক্রবার থেকে এই বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিগম পরিচালনার দায়িত্ব নেবে৷ কিন্তু পরপর দু'দিন ছুটি থাকায় আগামী সোমবার এই নতুন প্রশাসক দায়িত্ব নেবেন বলেই নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বিজেপি৷
রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ওই বোর্ডের বাকি সদস্য হিসেবে থাকবেন বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, দেবব্রত মজুমদার, বেবাশিস কুমার, মনজর ইকবাল, শামসুজ্জামান আনসারি, তারক সিং, ইন্দ্রাণী সাহা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন সমাদ্দার, আমিরুদ্দিন, রত্না দে, রাম পেয়ারি রাম, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়৷
করোনার জেরে অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে জরুরি এবং সাধারণ নাগরিক পরিষেবাগুলি সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা এখন চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বছরের অন্য সময়ের সঙ্গে এই মুহূর্তের পুর প্রশাসনের কাজের কোনও তুলনাই চলে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, যাঁদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাঁদের দীর্ঘদিনের কর্পোরেশন রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেকে বিদায়ী বোর্ডে মেয়র পারিষদও ছিলেন। এমনিতে, কর্পোরেশন বা মিউনিসিপ্যালিটিতে প্রশাসক বসালে তার দায়িত্ব দেওয়া হয় কোনও সরকারি আমলাকেই। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে তা হল না। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল পুর ভোট নিয়ে। ওই সময় থেকেই করোনা সতর্কতায় পদক্ষেপ শুরু হয় দেশজুড়ে। সেই সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুর ভোট স্থগিত করে দেয়। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এখন বাংলা তথা সারা দেশের যা পরিস্থিতি তাতে কবে ভোট হবে তা বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
শুধু কলকাতা নয়। রাজ্যের ১০০টির বেশি পুরসভার মেয়াদ ফুরোবে মে মাসের মধ্যে। সেই সবকটিতেই প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে নবান্নকে। অনেকের বক্তব্য, সবকটি পুরসভাতে হয়তো বিদায়ী চেয়ারম্যানদেরই প্রশাসকের দায়িত্ব দেবে নবান্ন।যদিও হাওড়া, চন্দননগরের মতো কর্পোরেশন এবং নৈহাটির মতো বেশ কয়েকটি মিউনিসিপ্যালিটির কাজ পরিচালনা করছেন প্রশাসকরাই। কারণ আগেই সেখানকার বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। হাওড়ার তো গত ছ’মাস ধরে ভোট বকেয়া রয়েছে। এবার প্রশাসক বসল কলকাতা কর্পোরেশনেও।
এই খবর প্রকাশ হতেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, ফিরহাদকে প্রশাসক করা খুবই অন্য়ায় কাজ হল। এ বিষয়ে আমরা আইনের সাহায্য নিতে পারি। এই বলেই অবশ্য থেমে থাকেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দিলীপবাবু বলেছেন, এটা ওদের আগে থেকেই ভাবনা ছিল। এর আগেও অনেক পুরসভা নির্বাচন করায়নি। এখন করোনার অজুহাতে এইসব করছে। ফিরহাদকে প্রশাসক করা খুব অন্যায় হল। আসলে নিজেদের দলের শাসন কায়েম রাখতে চায়। তাই ভোট করতে ওদের এত ভয়। আমরা আইনের সাহায্য নিতে পারি।