অঞ্জলি থেকে সিঁদুর খেলা, খারিজ ফোরামের আর্জি! রায় ঘোষণা হাইকোর্টের

অঞ্জলি থেকে সিঁদুর খেলা, খারিজ ফোরামের আর্জি! রায় ঘোষণা হাইকোর্টের

 

কলকাতা: বাংলার সমস্ত পুজোমণ্ডপ এবার দর্শকদের জন্য নো এন্ট্রি৷ করোনা আবহে উৎসবে লাগাম টেনে ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় ফোরাম ফর দুর্গাপুজা কমিটির প্রতিনিধিরা৷ জরুরি ভিত্তিতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে আজ হাইকোর্ট বেশ কিছু ছাড় দিলেও আগের নির্দেশ বহাল রেখেছে আদালত৷

আজ মামলার শুনানিতে পুজো উদ্যোক্তাদের স্বস্তি দিয়ে ঐতিহাসিক রায় পুনর্বিবেচনার করেছে হাইকোর্ট৷ তবে, আগের নির্দেশ বহাল রেখে বিধিনিষেধে কিছুটা সরল করেছে আদালত৷ আজ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মণ্ডপ নো-এন্ট্রি থাকবে৷ তবে, নো-এন্ট্রি জোনে পুজোর আচার-অনুষ্ঠান চলতে পারে৷ পুরোহিত, ঢাকি ও পুজোর উপাচারে যুক্ত ব্যক্তিরা অংশ নিতে পারেন৷ তবে, তার জন্য রয়েছে কিছু শর্ত৷ বড় মণ্ডপে সর্বাধিক ৬০ জনের প্রবেশাধিকার থাকবে৷ তবে একসঙ্গে ৪৫ জন থাকতে পারবেন না৷ ৩০০ বর্গমিটারের কম মণ্ডপে ১৫ জনের বেশি প্রবেশে করা যাবে না৷ একসঙ্গে ১০ জন ঢুকতে পারবেন না৷  প্রতিদিন তালিকা বদল করা যাবে৷ স্থানীয় বাসিন্দা ও পুজো উদ্যোক্তারা এই তালিকায় থাকতে পারবেন৷ প্রয়োজনে সেই তালিকা দিনে দিনে বদল করা যাবে৷

এদিনের শুনানিতে সিঁদুর খেলার কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ পুষ্পাঞ্জলি থেকে শুরু করে সন্ধি পুজোয় দর্শকদের উপস্থিতিতে কোনও ছাড় দেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট৷ আজ মামলার শুনানিতে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের বেশ কিছু ছাড়ের জন্য আবেদন করেন৷ অঞ্জলি দেওয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়৷ সপ্তমী থেকে অষ্টমী ও নবমীতে ধাপে ধাপে দর্শনার্থীদের মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়ারও আর্জি জানানো হয়৷ দুর্গা পুজোর নিয়ম মেনে সিঁদুর খেলার দাবি জানানো হয়৷ ঢাকিদের নো এন্ট্রি জোনে ঢুকতে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়৷ বেশি সদস্য যাতে মণ্ডপে ঢুকতে পাবেন, তার আর্জি জানানো হলেও তা খারিজ করে দেওয়া হয় আদালতের তরফে৷

হাইকোর্ট আগের রায় পুনর্বিবেচনা করে জানায়, নো এন্ট্রি জোনের ভিতরে ও মণ্ডপের বাইরে কয়েকজন ঢাকি শুধু উপস্থিত থাকতে পারবেন। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের মণ্ডপে ঢোকার ক্ষেত্রে আগে ২৫ জনের নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল। সেই তালিকা এখন প্রতিদিন সকাল বেলায় পুলিশকে দিতে হবে এবং বড় পুজোর ক্ষেত্রে ৬০ জনের নামের তালিকা দেওয়া যাবে। তার মধ্যে ৪৫ জন মণ্ডপের এলাকায় ঢুকতে পারবেন। এর বাইরে সিঁদুর খেলা, অঞ্জলি জন্য পর্যায়ক্রমে মণ্ডপে ঢোকার যে আবেদন করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, যে কারণে আগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার গুরুত্ব বুঝে রায় পরিবর্তন করা যায় না। করোনা বিধি পালনের উপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দর্শকশূন্য পুজো করার পক্ষেও আরও একবার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷

এদিনের মামলার শুনানিতে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, ৩০০ মিটার পরিধি নিয়ে মণ্ডপে ৬০ জন ঢুকতে পারবেন৷ ৬০ জনের তালিকা হলে ঢুকতে পারবেন ৪৫ জন৷ ৩০০ বর্গ মিটারের মণ্ডপে ১৫ জন প্রবেশ করতে পারবেন৷ ১৫ জনের তালিকা হলেও এক সঙ্গে ঢুকতে পারবেন ১০ জন৷ উদ্যোক্তারা, স্থানীয় নামের তালিকা আপডেট হতে পারে৷ করোনা বিধি মেনে নো-এন্ট্রি জোনে থাকতে পারবেন ঢাকিরা৷ তবে ঢাকিদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে হবে৷ এমনটাই নির্দেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ও বিচারপতি সঞ্জীব বন্দোপাধ্যায়ের বেঞ্চ৷

সোমবার দুর্গোৎসব বন্ধের আর্জি জানিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট৷ দুর্গোৎসবের ভিড় থেকে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে দর্শকশূন্য পুজোর নির্দেশ দেয় আদালত৷ রাজ্যের সমস্ত পুজামণ্ডপকে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করে নো-এন্ট্রি ঘোষণা করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ৷ জানিয়ে দেওয়া হয়,ছোটো পুজোমণ্ডপের অন্তত ৫ মিটার ও বড় পুজোমণ্ডপের কমপক্ষে ১০ মিটার ঘিরে রাখতে হবে৷ দিতে হবে ব্যারিকেড৷ সর্বোচ্চ ২৫ উদ্যোক্তাদের মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন৷ দর্শকরা কেউ ঢুকতে পারবেন না মণ্ডপে৷ পুজো মামলায় সোমবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের ঐতিহাসিক রায়কে বহাল রেখে বিধি কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ হাইকোর্টের নয়া নির্দেশ পুজোকমিটিগুলির পক্ষে স্বস্তি হলেও এবার উৎসব যে কিছু হলেও ফিঁকে করে দিয়েছে করোনা মহামারী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *