bus owners
নিজস্ব প্রতিনিধি: কথাতেই বলে পুজোর ভ্রমণ। দুর্গাপুজোতে ঠাকুর দেখার পাশাপাশি ভ্রমণের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক যেন মেড ফর ইচ আদারের মতোই। পুজোর ক’টা দিন ঘুরতে যাওয়ার জন্য বঙ্গ সমাজের একটা বড় অংশের মন ছটফট করে। তাই প্রতিবারের মতো এবারেও বিপুল সংখ্যক মানুষ বেড়াতে গিয়েছেন। যথারীতি বেড়ানোর জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে উত্তরবঙ্গের। এছাড়া পুরী, দিঘা তো রয়েছেই। এবার পুরুলিয়া যাওয়ার ব্যাপারেও মানুষের প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
শুধুমাত্র পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ একাধিক বিশেষ ট্রেনও দিয়েছে। অন্যদিকে বহুদিন আগে থেকেই উত্তরবঙ্গগামী সমস্ত ট্রেনের সংরক্ষিত আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। যাত্রীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে পুজো স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে পূর্ব রেল। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই টিকিট পাননি। তাই পুজোর সময় পর্যটকদের উত্তরবঙ্গে পৌঁছে দিতে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত অতিরিক্ত বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা। কিন্তু তাতেও চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকেই জানাচ্ছেন। আর সেই কারণেই মওকা বুঝে ধর্মতলা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসভাড়া বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন বেসরকারি মালিকদের একাংশ। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার বাস ভাড়া জনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। অথচ এমনিতে ভাড়া এর থেকে অনেকটাই কম।
একই ভাবে বিমানের টিকিটের দামও আকাশছোঁয়া হয়েছে। এরপরেও যথারীতি উদাসীন রাজ্য প্রশাসন। বিমান ভাড়া যাতে না বাড়ে সেই ব্যাপারে কেন্দ্রের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। আর বাস মালিকদের এই মুনাফা লোটা বন্ধ করার ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসন তেমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে বলে তো শোনা যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এই সমস্ত ক্ষেত্রে কেন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না? কেন এভাবে যাত্রীদের হেনস্থার শিকার হতে হবে? প্রতিটি উৎসবের সময় বেসরকারি বাস মালিকরা দূরপাল্লার বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কেন এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? তবে শুধু পরিবহণ ব্যবস্থা নয়, হোটেল মালিকরাও ভাড়া প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেড় হাজার টাকার ঘর ভাড়া পুজোর দিনগুলিতে তিন থেকে চার হাজার টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। খাবারের মেনু চার্টেও দাম বাড়ানো হয়েছে প্রত্যেকটি আইটেমে। অর্থাৎ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
একই ভাবে কলকাতার রাস্তায় অটো ভাড়া অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। যানজট, ঘুরে যেতে হবে এরকম নানা কারণ দেখিয়ে খেয়াল খুশি মতো অটো ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ বুঁজে যাত্রীদের সেটা মেনে নিতে হচ্ছে। এখানেও আসছে নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ। বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। কিন্তু সরকার তথা প্রশাসন নিশ্চুপ অবস্থায় থাকে। যার মাশুল গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে। যাত্রীদের বাড়তি গাঁটের কড়ি খরচ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাই প্রশ্ন, আগামী বছরের পুজোর দিনগুলিতে এই ব্যবস্থার কি আদৌ কোনও পরিবর্তন হবে? নাকি এই ধারাই বজায় থাকবে? এই সমস্ত প্রশ্ন রেখেই শেষ হবে চলতি উৎসবের মরসুম।