বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ হতেই সিওপিডি নিয়ে শুরু কাটাছেঁড়া! অত্যধিক ধূমপানেই সমস্যা?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ হতেই সিওপিডি নিয়ে শুরু কাটাছেঁড়া! অত্যধিক ধূমপানেই সমস্যা?

কলকাতা:  প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিওপিডির মারাত্মক সমস্যা নিয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হয়েছে তাঁর শ্বাসনালিতে সংক্রমণ রয়েছে এবং টাইপ টু রেসপিরেটরি ফেলিওর হয়েছে। যদিও সোমবার সকালে তাঁর সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ততটা খারাপ কিছু নেই বলেই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির সামান্য হলেও উন্নতি হয়েছে। যদিও সঙ্কট এখনও কাটেনি।

ঘটনা হল পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধূমপান করে আসছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ‌তিনি ‘চেন স্মোকার’ ছিলেন। আর সেই কারণেই মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে তাঁর ফুসফুসে। এমনও শোনা যায় যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মহাকরণে বসতেন তখন ধূমপানের জন্য তাঁর একটি পৃথক চেম্বার ছিল। একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ‘কিং সাইজ’ সিগারেট ঘন ঘন খেতেন তিনি। বছর তিনেক আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে তিনি করোনাতেও আক্রান্ত হন। সেই অসুস্থ অবস্থা থেকে কিছু সুস্থ হয়েই তিনি ফের সিগারেট খেতে চান বলে জানা যায়। যদিও চিকিৎসকদের কড়া আপত্তিতে বুদ্ধদেব তখন জানিয়েছিলেন তিনি এবার সিগারেট ছাড়বেন। পরবর্তীকালে বাড়িতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

 

সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ মূলত হয় অত্যধিক ধূমপানের কারণে। করোনা শুরু হওয়ার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় এক বছরে ৩.২৩ মিলিয়ন মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন সিওপিডি মারাত্মক আকার নিলে ফুসফুসের অ্যালভিওলাই এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে আক্রান্তরা তখন বুক ভরে বাতাস নিতে পারেন না। অসম্ভব কাশি হয় তাঁদের।

তাই প্রশ্ন, কেউ যদি কোনও দিন ধূমপান না করেন তাহলে কি তিনি এই অসুখে আক্রান্ত হবেন না? এ বিষয়ে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ধূমপান না করলে সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তবে বর্তমানে যেভাবে বায়ু দূষিত হয়েছে তাতে ধূমপান না করলেও এই রোগে মানুষ আক্রান্ত হতেই পারেন। মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে বহু মানুষের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ফুসফুসের সমস্যা শুরু হতেই পারে। এর পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন গ্রামগঞ্জে এখনও কোটি কোটি মানুষ গ্যাস সিলিন্ডারের পরিবর্তে কাঠ, কয়লা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ করেন। সেই ধোঁয়ার মধ্যে থেকে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে মহিলা বা পুরুষরা সিওপিডিতে আক্রান্ত হতে পারেন বলে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন। 

 

বিজ্ঞানীরা বলছেন বায়ুদূষণ কমাতে না পারলে সিওপিডি বা ফুসফুসের বিভিন্ন রোগকে ঠেকানো মুশকিল হবে। বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ভাসমান কণার পরিমাণ সহনশীল মাত্রা থেকে কলকাতা তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চার থেকে দশগুণ বেশি অবস্থায় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি রাজ্য হল দিল্লি। কলকাতারও একাধিক জনবহুল এলাকায় এর মান অত্যধিক বেশি। আর সেই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে প্রতি দশ সেকেন্ডে সিওপিডিতে আক্রান্ত হয়ে একজন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

কয়েক বছর আগে একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় আমেরিকায় সিওপিডিতে আক্রান্ত এক রোগী এতটাই খারাপ স্টেজে চলে গিয়েছেন যে তিনি হাসতে পর্যন্ত পারেন না। কারণ হাসতে গেলে যে অতিরিক্ত শ্বাসবায়ুর দরকার হয় সেটা তিনি ফুসফুস থেকে নিতে পারছেন না। এতেই স্পষ্ট কতটা খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সাধারণভাবে এই রোগে আক্রান্তদের প্রথমে কাশি হতে শুরু করে। তাই প্রথম থেকেই আক্রান্তদের ধূমপান ছাড়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এর থেকে অনেকটাই মুক্ত হওয়া যায়। পালমোনারি ফাংশন টেস্ট বা ‘পিএফটি’ করে চিকিৎসকরা রোগীর ফুসফুসের অবস্থা বুঝে সেই মোতাবেক ট্রিটমেন্ট করেন।

এছাড়া প্রয়োজনে এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান করা হয় রোগীদের। সেই সঙ্গে করা হয় একাধিক রক্তের পরীক্ষা। দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে নিতে হয় ইনহেলার। তবে সবটাই করতে হবে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী। তাই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই সিওপিডি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে সব মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 5 =