কলকাতা: গরু পাচারকাণ্ডে এবার সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজে পেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ গরু পাচারের তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার৷ আজ তাঁকে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু অসংগতি থাকায় সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই৷
অভিযোগ এই সতীশ কুমার গরু পাচার কাণ্ডের মূল চক্রি এনামুল হকের থেকে মোটা টাকা ‘বেতন’ নিতেন৷ তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, সতীশ কুমারের মাধ্যমে এনামুল হক গরু পাচারের সাম্রাজ্য বাড়িয়েছিল৷ এই কাজে বিএসএফ কর্তা-সহ কাস্টমসের অফিসাররাও৷ গোটা ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের নদর রয়েছে রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন আধিকারিক৷ অভিযোগ, এনামুলের গরু পাচারের ব্যবসা চালাতে সহযোগিতা করতেন তাঁরা৷ সতীশের গ্রেফতারির পর বাকিদেরও ধাপে ধাপে জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে খবর৷
বিএসএফের কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকে গ্রেফতারি গোটা তদন্তে নতুন দিক খুলে দিতে পারে বলে অনুমান পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷ আজ সকাল ১১টায় বিএসএফের কমান্ডান্ট সতীশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ ৩ দফায় জেরার পর করা হয় গ্রেফতার৷ সূত্রের খবর, জেরায় একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন সতীশ কুমার৷ এর আগেও ৩ বার তাঁকে তলব করা হলেও হাজিরা এড়ান এই সিবিআই কর্তা৷ তৃতীয় নোটিসের পর আজ হাজিরা দেন তিনি৷ আজ জেরায় ২০১৭ সালে মুর্শিদাবাদে তাঁর সঙ্গে এনামুল হকের লেনদেনের বিষয়ে জানতে চান তদন্তকারীরা৷ হিসাব বহির্ভূত আয় নিয়েও জানতে চাওয়া হয়৷ জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিএসএফ কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর৷
অভিযোগ, কলমের এক ‘খোঁচা’য় গরুকে বাছুর বানিয়ে দেওয়া হত৷ সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চলত গরু পাচারের কারবার৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই জানতে পেরেছে, গরু পাচারের মূল অভিযুক্তর সঙ্গে যুক্ত থেকে এই কাজে সহযোগিতা করতেন এই বিএসএফ-কর্তা৷ সঙ্গে ছিলেন কাস্টমসের বহু আধিকারিক৷ সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে একাধিক পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকের ভূমিকা৷ গোটা ঘটনার তদন্তে নেমে আগেই এফআইআর দায়ের করে সিবিআই৷ সেখানে মূল অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সতীশ কুমার৷ গরু পাচারের মূল অভিযুক্ত হিসাবে ‘করোনা আক্রান্ত’ এনামুল হককে আগেই গৃহ-পর্যবেক্ষণে রেখে সিবিআই৷ এবার বিএসএফের কমান্ডান্ট পদমর্যাদার আধিকারিককে গ্রেফতার করল সিবিআই৷
সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যযন্ত সতীশ কুমার মুর্শিদাবাদে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন৷ ১৬ মাসে মালদহ-মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় ২০ হাজার গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ উদ্ধার হওয়া গরু সরকারি নথিতে বাছুর হিসাবে দেখানো হত৷ কলমের খোঁচায় গরু থেকে ‘বাছুর’ হওয়া গবাদি পশুকে তোলা হত নিলামে৷ আর নিলামে গরু কম দামে কিনে নিতেন এনামুল হকের গোষ্ঠীরা৷ নিলামে কেনা গরু ফের সীমান্ত পেরিয়ে পাচার হত বাংলাদেশে৷এই কাজে গরু প্রতি ২ হাজার টাকা ও ৫০০ টাকা কাস্টমসের জন্য বরাদ্দ রাখা হত জানতে পারেছেন গোয়েন্দারা৷