board president
নিজস্ব প্রতিনিধি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত পর্ব বেশ জমে উঠেছে। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখলে সেটাই স্পষ্ট হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিল্লি থেকে এক অভিজ্ঞ সিবিআই আধিকারিক কলকাতায় আসছেন তদন্তের গতি বাড়াতে। সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলে যোগ দেবেন তিনি। এর পাশাপাশি সদ্য ওএমআর শিট বিকৃতি কাণ্ড, যা কিনা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম অংশ তাতে সদ্য গ্রেফতার হয়েছেন এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির অন্যতম দুই কর্তা পার্থ সেন ও কৌশিক মাজি। উল্লেখ্য এই সংস্থা ওএমআর শিট তৈরি করেছিল। এই আবহের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পাল এবং ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার। তাদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা পরিষ্কার যে রীতিমতো জমে উঠেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত পর্ব।
মূলত ওএমআর শিট বিকৃতি কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গৌতম পালকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। ঘটনা হল নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে বুধবার তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল ও ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকারকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বুধবার সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকী বিচারপতি এটাও বলেন, তদন্তে যদি গৌতম পাল সহযোগিতা না করেন তবে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে। সেক্ষেত্রে পর্ষদ সভাপতিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই। আর বুধবার সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যেই নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে তাঁদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই সূত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান গৌতম পাল এবং পার্থ কর্মকার। বুধবার হাই কোর্টে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। ২০১৪ সালের টেট দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েই বিচারপতির নির্দেশ, দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে হবে গৌতম এবং পার্থকে। এ বিষয়ে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
উল্লেখ্য আদালতে পেশ করা সিবিআই রিপোর্টে পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে একটি সূত্রে খবর। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি এমন ভাবে ওএমআর শিট তৈরি করেছিল যাতে প্রার্থীর নাম বা রোল নম্বর কোনও কিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, সিবিআই রিপোর্ট বলছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। তাই ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পরেও বর্তমান পর্ষদ কর্তারা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকেই ওএমআর শিট তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে। তাই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এরপরই আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে গৌতমকে। অথচ একটা সময় আদালত গৌতম পালের কাজকর্মের প্রশংসা করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে হঠাৎ এমন কি ঘটল যাতে গৌতম পালকেও সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হল? তবে কী সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এমন বিস্ফোরক রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছে যা গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে? তবে কী দুর্নীতি কাণ্ডে আরও নতুন নাম উঠে আসতে পারে যা দেখলে চমকে উঠতে হবে? এই জল্পনা যথারীতি শুরু হয়েছে। ঘটানো হল বিগত কয়েক মাস ধরে নিম্ন আদালতের পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেন তদন্ত এত ঢিমেতালে চলছে সেই প্রশ্ন বারবার উঠেছে। তবে কী সেই কারণেই এবার তদন্তে গতি বেড়েছে? অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রত্যাশিত ভাবে বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী রাজ্যবাসী। সবারই আশা এবার তদন্ত দ্রুত শেষ হয়ে দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবেন। তাই আগামী কয়েক মাসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নতুন কোনও বাঁক আসে কিনা সেটা নিয়ে আমজনতার কৌতূহল থেকেই যাচ্ছে।