কলকাতা: তিন বছর পর ফের বড়সড় ব্রিগেড সমাবেশ করছে রাজ্য বামফ্রন্ট৷ সমাবেশ মঞ্চ থেকে এদিন তৃণমূল-বিজেপিকে আক্রমণ করেন বাম নেতারা৷ রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে উঠেই মোদি-মমতাকে কাঠগড়ায় তুলে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম৷ শুরুতেই বলেন, ‘‘লাল সমুদ্রকে বাধা দিলে সুনামি হবে৷ আজ বাংলা ও দেশকে বাঁচাতে হবে৷ আজ, তাই আমরা এখানে এসেছি৷ বাংলার সরকার ভাঁওতা দিচ্ছে৷ দেশের সরকার মানুষকে জুমলা দিচ্ছে৷ কারণ, দাদা-দিদির সেটিং হয়ে গিয়েছে৷’’
বলেন, ‘‘ওদের কাছে আরএসএস হচ্ছে দেশপ্রেমিক৷ দেশপ্রেমর নামে জিগির তোলা হচ্ছে৷ বাংলায় দিদির সরকার ও দেশের দাদার সরকার এতদিন পর কৃষকদের কথা মনে পড়ল৷ কেন, সামনেই ভোট না৷ বলে রাখছি, এটাও জুমলা৷ কারণ, বিজেপির আমলে কৃষকরা দাম পাচ্ছে না৷ আর বাংলায় কৃষকরা আত্মহত্যা করছে৷ কিন্তু, এই নিয়ে কেউ কিছুই বলছে না৷ কারণ, চোরের সাক্ষী মাতাল, আর দিদির সাক্ষী দাদা৷’’ এদিন চিটফান্ড কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে ‘চোর’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘সব চুরির টাকা ওই কালীঘাটে গিয়ে জমা হয়৷ এখন দিদি বলছে, আমি ছবি বিক্রি করে টাকা নিইনি৷ কিন্তু, এই দিদিই বলেছিলেন, আমি ফটাফট ছবি আঁকি, আর বিক্রি করি৷ এবার আপনিই বলুন, কোনটা ঠিক৷’’ বলেন, ‘‘সেদিনও বলেছি তৃণমূল চোর, আজও বলেছি তৃণমূল চোর৷’’
এদিন মঞ্চে উঠেই মহাজোটকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র৷ শুরুতেই মমতাকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, এই ব্রিগেড থেকে বিজেপিকে হঠাতে ডাক দিয়েছিলেন ২১ জন নেতা৷ তার মধ্যে নজন ছিলেন বিজেপির মন্ত্রী৷ এটাই এখন অবস্থা৷ আমরা, চার বছর আগে বলেছিলাম, দেশের শত্রু বিজেপি৷ কিন্তু, দিদি এখন বুঝেছেন৷ তাও অর্ধকটা৷’’ এদিন তিনি বলেন, ‘‘পেটে ভাত চাই, কাজ চাই দিদি, পারবেন দিতে৷ আজ, সারা দেশে যখন বেকারত্ব বাড়ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমছে৷ আমাদের প্রশ্ন, কত চাকরি দিয়েছেন বলুন৷ মুখ্যমন্ত্রীর বেতন ৯০ হাজার হলে রাজ্যের কর্মীদের ১৮ হাজার হবে না কেন? রাজ্যে নূন্যতম ১৮ হাজার ও পেনশন ৬ হাজার টাকার দাবিতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব৷’’
এদিন ব্রিগেড সমাবেশে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য৷ বলেন, ‘‘আজ আমর সরকারে নেই৷ তবুও, আজ ব্রিগেড প্রমাণ করে দিল, বামেরা জানতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে৷’’ এদিন ব্রিগেডে আসা কর্মসমর্থকদের অভিভাদন জানান তিনি৷ এদিন শুরুতেই বাজেট, এনআরসি, কর্মসংস্থান, জিএসটি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কোথায় চাকরি মোদীবাবু? কোথায় শিক্ষা? আজ আপনাকে উত্তর দিতে হবে৷ পাঁচ বছর পর এসে বলছেন শ্রমিকদের পেশন দেবেন তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু, আজ থেকে ২০ বছর পর তিন হাজার টাকার মূল্য কী থাকবে? এটা প্রতারণা ছাড়া আর কী৷’’ এদিন রাজ্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন৷ বলেন, ‘‘ভাঙড়ে কেন কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না৷ কী অবস্থা সিঙ্গুরের কৃষকদের? এটাই কী বাংলার কৃষি উন্নয়ন৷’’ কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ‘‘দিদি যুবক-যুবতীদের বলেছিলেন, কর্মসংস্থানের দেবেন৷ কিন্তু, আজ দিদি পিসিমনিতে পরিণত হয়ে গিয়েছেন৷’’
এদিন মঞ্চে উঠে হাসির খোরাক হলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি৷ আধা বাংলা, আধা হিন্দিতে ভাষণ দিতে গিয়ে সভার তাল খোয়ালেন ইয়েচুরি৷ এদিন মঞ্চে উঠে দলীয় নেতা কর্মীদের চৌকিদারের গল্প শুনিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন৷ বলেন, ‘‘চৌকিদারের ছুটি হয়ে যাবে৷ কারণ দেশ নেতা নয়, নীতি চাই৷’’ বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ দিল্লি থেকে মোদীকে আর বাংলা থেকে মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে৷ বাধা এলে প্রতিরোধের আগুন জ্বলবে৷’’
এদিন ব্রিগেডে আরএসপির সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, ‘‘নোট বাতিলে ৮৬ শতাংশ মানুষের ক্ষতি হয়েছে৷ নোটবন্দির নামে দেশকে লুট করা হয়েছে৷ কর্মসংস্থানের কথা বলে বেকারত্ব বাড়িয়েছে৷ সাধারণ মানুষকে ধোঁকাবাজির করা হয়েছে৷ এখন বিজেপি ধর্মের নামে রাজনীতি করছে৷ আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকার দিকেও হাত বাড়িয়েছে মোদি সরকার৷ দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি নষ্ট করা হয়েছে৷ সংস্থাগুলির মাথা বসে গিয়েছে৷ একদিকে দেশে বিজেপির গণতন্ত্র লুটের রাজনীতি করছে, অন্যদিকে নিন্দার রাজনীতি করছে তৃণমূল৷ আসুন তাই আমরা নতুন সরকার গড়ে তুলি৷’’
এদিন ব্রিগেডে বক্তব্য রাখেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি৷ বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত৷ গণতন্ত্র বিপন্ন৷ গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে৷ ৫ বছরে বিজেপি কিছুই করতে পারেনি৷ তাই সরকারের পতন চাই৷’’ এদিন হুগলি জেলা সিপিএমের নতুন সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘মোদি গান্ধীজি চশমা চুরি করে স্বচ্ছ্ব ভারত করা হয়েছে৷ যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি গান্ধীজিকে হত্যা করেছিল, সেই রাজনীতি এরা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে বিজেপির কোনও অবদান নেই৷ আর এদের মুখেই বড় কথা৷ রাজ্যের এই পরিবেশে শিল্প আসবে না৷ তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই৷ গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে৷ কৃষকদের আয় কমছে৷ শুধু শিল্পপতিরা লাভবান হচ্ছে৷ তাই এই সরকারের আর আমাদের দরকার নেই৷’’
জনতার ব্রিগেড’ সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ রবিবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘আজ দেশ-রাজ্যে গণতন্ত্র লুট করা হয়েছে৷ বিজেপি-তৃণমূল একই ভাবে দেশে-রাজ্য অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছে৷ কারণ, বিজেপি-তৃণমূল একই বৃন্তে দুটি ফুল৷ আজ, রাজ্য আরএসএস বেড়ে ওঠার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাত সব থেকে বেশি৷ তাই আমরা বলছি এই দুই সরকারের বিনাশ৷’’
এদিন সভার প্রথম বক্তা হিসাবে বলতে গিয়ে মেজাজ হারান বিমান৷ মঞ্চে বাম নেতাদের কথা বলতে নিষেধ করে বলেন, ‘‘দেখছেন না, কত মানুষ এসেছেন! এত কী কথা৷ এই সব এখানে চলবে না৷’’ সভা শেষে কর্মীদের বলেন, ‘‘আপনারা কেউ মুখে কিছু বলবেন না৷ স্বেচ্ছাসেবকদের ডেকে নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে ফেলুন৷’’