কলকাতা: বঙ্গ বিধানসভা ভোটে যুযুধান দুই শিবিরের লড়াই ঘিরে যখন টানটান উত্তেজনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ে হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম, তখন চর্চায় কেন্দ্রে উঠে এসেছিল আরও একটি নাম৷ তিনি হলেন শালতোড়ার বিজেপি প্রার্থী চন্দনা বাউরি৷ ভোটে জিতে তিনি এখন অবশ্য বিধায়ক৷ বিজেপি’র ‘দরিদ্রতম’ প্রার্থী হিসাবে বঙ্গ রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছিলেন তিনি৷ রাজনীতির ময়দানে তাঁর লড়াই, জীবন সংগ্রাম, তাঁর জেদ সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে৷ দিয়েছে এগিয়ে চলার নতুন উদ্দম৷
আরও পড়ুন- শম্পা সরকারের এজলাসে আজ শুনানি শুরু নন্দীগ্রাম মামলার
চন্দনার স্বামী পেশায় দিনমজুর৷ দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ৷ অত্যন্ত অভাবের সংসার৷ তাঁর টালির চালে রোদ-বৃষ্টির অবাধ আনাগোনা৷ বাড়ির দেওয়ালে আজও পড়েনি সিমেন্টের প্রলেপ৷ এহেন জায়গা থেকেই উঠে আসা তাঁর৷ বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে এতদিন কলকাতায় ছিলেন শালতোড়ার বিধায়ক৷ গত দেড় সপ্তাহ ধরে তাঁর ঠিকানা ছিল কলকাতার এমএলএ হোটেল৷ নব নির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি ক্লাস করেছেন মন দিয়ে৷ নিজের কোনও কাজেই খামতি রাখতে চান না চন্দনা৷ নিজের কর্তব্যে তিনি অটল৷ কিন্তু বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন মা৷ তাই কলকাতায় কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর মন পড়েছিল শালতোড়ার একচালার ভাঙা বাড়িতে পড়ে থাকা অসুস্থ সন্তানের কাছে৷ যখন তিনি কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন, তখন তাঁর ছেলে বাবু জ্বরে আক্রান্ত৷ বাবুকে পরিবারের কাছে রেখেই স্বামীর হাত ধরে কলকাতায় আসেন চন্দনা৷
এরই মধ্যে চন্দনা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মায়া জড়ানো পোস্ট করেছেন৷ যেখানে তাঁর ছোট্ট ছেলের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘মিস ইউ’৷ এতদিন কলকাতার ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অদম্য চেষ্টা চালিয়েছেন চন্দনা৷ বদলেছেন দিনলিপি৷ কিন্তু মন কী সন্তানদের ছাড়া ভালো থাকতে পারে? তাইতো ছেলের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন ‘মন কেমনের কথা’৷ আপাতত শালতোড়ার ভাঙা বাড়িতে সন্তানের কাছে ফিরে গিয়েছেন চন্দনা৷ ছেলেকে কোলে তুলে আনন্দে মন ভরে গিয়েছে তাঁর৷ ছেলে মেয়ের ছবি একসঙ্গে পোস্ট করে ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘কিউট চিলড্রেন’৷ ছেলে মেয়েকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চন্দনা বলেন, “এতদি পর ছেলেমেয়েকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত৷ অনেক দিন পর আমার বাবুকে দেখতে পেলাম৷ অনেক অনেক আদর করেছি। আমার তো ওকে ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছাই করে না।”
আরও পড়ুন- ‘বেসুরো’ বাবুলের মানভঞ্জন! বিশেষ দায়িত্ব পেলেন আসানসোলের সাংসদ
দরিদ্র এই বিধায়কের কাঁধেই এখন বিপুল দায়িত্ব৷ পিছিয়ে পড়া শালতোড়ার উন্নয়নের কাজ করতে হবে তাঁকে৷ তাঁর পারিবারিক পরিস্থিতি যেমনই হোক, মানুষের কাজ করাই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার৷ এটাই তাঁর জীবনের সংকল্প৷ তাঁর জীবনের একটাই মন্ত্র, ‘সকলের সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’৷