রাজনীতি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ড তুলে তুলোধোনা

রাজনীতি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ড তুলে তুলোধোনা

কলকাতা: সম্প্রতি দশ বছরের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছে তৃণমূল সরকার৷ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত শাসক দল৷ অন্যদিকে তাদের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরে বুকলেট প্রকাশ করতে চলেছে বিজেপি৷ যা আগামী দিনে প্রতিটি জেলায় ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে তারা৷ শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মহিলা সুরক্ষার মতো একাধিক বিষয়ে তৃণমূলের ব্যর্থতার কাহিনী তুলে ধরে প্রচারে নামতে চলেছে গেরুয়া শিবির৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে সেই কথা স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য, সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং  বিজেপির নির্বাচন কমিশন বিভাগের আহ্বায়ক শিশির বাজোরিয়া৷   

আরও পড়ুন- অনেকটাই  সুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বাড়ি ফিরে শেষ করতে চান বই লেখার কাজ

এদিন শমীক ভট্টাচার্য বলেন, গত দশ বছরে  তৃণমূল সরকার মানুষের সামনে উন্নয়নের যে খতিয়ান তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে বাস্তবের প্রায় কোনও মিল নেই৷ বর্তমানে রাজ্যে কোনও বিনিয়োগ নেই৷ তিনি জানান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়াদের শেষ সময় রাজ্যে বিনিয়েগোর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা৷ তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছর বিনিয়োগ ছিল ৩১৮ কোটি টাকা৷ এর পর থেকে কোনও ভাবেই বিনিয়োগের প্রকৃত চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নিয়ম মাফিক বিনিয়োগ বা কিছু মৌ চুক্তি সামনে এনে বিনিয়োগের খতিয়ান দেখানোর চষ্টা করেছে শাসক দল৷ কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী যে বিনিয়োগের খতিয়ান মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তার ১ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে৷ 

তাঁর দাবি, গত দশ বছরে আড়াই হাজার কোটির বেশি বিনিয়োগ রাজ্যে হয়নি৷ বিভিন্ন শিল্পপতি বাংলায় এলেও পরে তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন৷ কর্মসংস্থান বা চাকরির পরিসংখ্যানের সঙ্গেও বাস্তবের কোনও মিল নেই৷ ডিজিপি-তে রাজ্যের স্থান ৩১৷ ব্যক্তিগত আয়ের হিসাবে বাংলার স্থান ২২ নম্বরে৷ শমীকবাবু বলেন, ‘‘২০১১ সালে রাজ্যে ঋণের নিরিখে প্রতিটা শিশু তার মাথায় ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জন্মাত৷ তৃণমূল ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সময় প্রতি শিশুর মাথায় থাকব ৬৫ হাজার টাকার ঋণের বোঝা৷’’ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা৷ এখন তা বেড়ে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও তৃণমূল সরকার ব্যর্থ বলেই সুর চড়ান তিনি৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা চলছে৷ বিরধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে৷  

আরও পড়ুন- এবার হাসপাতাল ভাড়া দেবে রাজ্য! স্বাস্থ্যে আসছে বেসরকারি বিনিয়োগ!

শমীক ভট্টাচার্য বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও ব্যর্থ রাজ্য সরকার৷ রাজ্যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করে সকলকে পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আজ প্রতিটি জেলায় সরকারি হাসপাতালের অবস্থা বেহাল৷ আর শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যের পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে হাই কোর্টের রায়৷ আপার প্রাইমারি প্যানেলই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ গত দশ বছরে মাত্র ২টো টেট পরীক্ষা নিতে পেরেছে তৃণমূল সরকার৷ তাও দুর্নীতি মুক্ত ভাবে নয়৷  

তাঁর কথায়, প্রশাসনের রাজনীতিকরণ হয়েছে৷ বাম জমানায় প্রশাসন ও দলের মধ্যে সীমারেখা সূক্ষ হলেও বেঁচেছিল৷ তৃণমূল জমানায় তা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গিয়েছে৷ দখলদারির রাজনীতি চলছে৷ সরকার সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে৷ তিনি বলেন, আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কৃষি বিরোধী বলা হচ্ছে৷ অথচ এ রাজ্যে কৃষকদের দূরাবস্থা কারোও অজানা নয়৷ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বলতে কিছু নেই৷ সবটাই নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যসত্ত্বভোগী ফোড়েরা৷ 

বাজোরিয়া বলেন, ‘‘প্রশাসনিক বৈঠক দলের বৈঠক হয়ে উঠেছে৷ কোভিড বুলেটিন নিয়েও মিথ্যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে বললেন করোনা এক্সপ্রেস৷ তাদের শৌচালয়ে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে৷ ক্ষমতায় আসার পরই বেঙ্গল লিডস বদলে গিয়েছে বিজিবিএস-এ৷ প্রতি বছরই তাদের ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে আড়াই লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে৷ কিন্তু চোখে কিছুই দেখা গেল না৷ তৃণমূল সরকারের সবটাই ভাওতা৷’’ 

তৃণমূল সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে তাদের তুলোধোনা করেন স্বপন দাশগুপ্তও৷ তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ১৪.৮ শতাংশ পাকা রাস্তা৷ এনসিআরপি’র তথ্য অনুযায়ী নারী নির্যাতনে পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় স্থানে৷ ধর্ষণের চেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে৷ অ্যাসিড আক্রমণেও প্রথম৷ এটাই কী দশ বছরের সাফল্য? প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ 


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *