বিধানসভার যুদ্ধে লকেট-বাবুল, পদ্ম-দৈন্য কি পরোক্ষে কবুল?

বিধানসভার যুদ্ধে লকেট-বাবুল, পদ্ম-দৈন্য কি পরোক্ষে কবুল?

বিবস্বান বসু: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটের জন্য রবিবার ৬৩ জনের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি৷ নবান্ন অভিযানের সেই তালিকায় যেমন তারকা মুখের দেখা মিলেছে, তেমনই জায়গা পেয়েছেন দলের উচ্চস্তরের নেতা-নেত্রীরা৷ যশ দাশগুপ্ত, পায়েল সরকার, অঞ্জনা বসুদের মতো টলিউডের চেনা মুখরা বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন বটে, তবে চমকটা হল, সাংসদদেরও বিধানসভার যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া৷ আর সেটা এক-দু’জন নয়৷

রবিবার অমিত শাহের বঙ্গ সফরের মধ্যেই প্রকাশিত ৬৩ জনের নামের তালিকায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উপস্থিতি ৪ জনের—বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, নিশীথ প্রামাণিক ও স্বপন দাশগুপ্ত৷ সূত্রের খবর বলছে, এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী দফার তালিকাগুলোয় নাম থাকতে পারে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আরও বেশ কয়েকজন সাংসদের৷ কিন্তু কেন? ক্ষমতায় এলে আগামীর ছবিটা কেমন হবে, তার আভাস দিতেই কি এমন ওজনদার প্রার্থী নির্বাচনের কৌশল নাকি ২৯৪ কেন্দ্রে ‘যোগ্য’ মুখ তুলে ধরতে না-পারার দৈন্য ঢাকতেই ইংলিশ চ্যানেলজয়ীদের নামিয়ে দেওয়া গঙ্গাবক্ষের সাঁতার প্রতিযোগিতায়?

বিধায়ক সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন বা লোকসভায় পরাজিত প্রার্থী বিধানসভার লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন, সেটা মোটেই কোনও অপরিচিত ছবি নয়। আর তা নিয়ে বিশেষ প্রশ্নও ওঠে না। কিন্তু চার-চারজন বর্তমান সাংসদ, তায় আবার একজন মন্ত্রী, দিল্লির পাট আপাতত শিকেয় তুলে রাজ্য দখলের কুরুক্ষেত্রে নেমে পড়ছেন, তা যেমন কতকটা বেনজির, তেমন আবার প্রশ্নবোধকও বটে। সবচেয়ে জোরালো যে প্রশ্নটা উঠছে, বিজেপি কি নবান্ন দখলের লড়াইয়ে নেমেছে শুধুই গেরুয়া হাওয়ায় ভর করে? পশ্চিমবঙ্গের মসনদে পদ্ম ফোটানোর মতো তৃণমূল স্তরে যথেষ্ট সংগঠন কি তারা গড়ে তুলতে পারেনি? মিঠুন নাকি অন্য কেউ, ‘ভূমিপুত্র’ মুখ্যমন্ত্রীর মুখটা যেমন স্পষ্ট হয়নি, তেমনই কি ধোঁয়াশা রয়েছে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে শক্তির বিচারেও?

এটা ঠিক যে, গত লোকসভা নির্বাচনে চমকে দিয়ে ১৮ আসন দখল করার পর এরাজ্যে বিজেপি আড়ে-বহরে অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু সে তো না-হয় মোদি-মন্ত্র জপ করে। ২০০ পারের আওয়াজ তুললেও, একুশের রণাঙ্গনে ১৪৮-এর ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারার জন্য বুথ পর্যায়ে পায়ের তলার মাটি যতটা শক্ত হতে হয়, তা হয়েছে তো? বিরোধীদের প্রশ্ন, ভিত যদি মজবুতই হবে, তা হলে বাবুল-লকেটদের কেন আবার নামাতে হচ্ছে বিধানসভার ব্যাটলে? মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা হয়তো যুক্তি দেবেন, রাজ্যে পরিবর্তন যেখানে শুধুই সময়ের অপেক্ষা, সেখানে ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভার চেহারা কেমন হবে, এটা তারই ট্রেলার। কিন্তু ক্ষমতা দখল যদি এতই নিশ্চিত হবে, তা হলে কেন স্থানীয় ‘যোগ্য’ মুখের ভরসা না-করে আস্তিন থেকে বার করতে হচ্ছে ব্রহ্মাস্ত্র-পাশুপত, কেন টিকিটের তালিকায় ভিড় বিক্ষুব্ধ তৃণমূলিদের?

আর যে প্রশ্নটা সংগত কারণেই ওঠা উচিত, তা হল, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া সাংসদরা যদি ২ মে শেষ হাসি হাসেন, তা হলে আবার যে উপনির্বাচনের ভার বইতে হবে জনগণকে, তাঁদেরই করের টাকায়, সেই আর্থিক অপচয়ের দায় কে নেবে? বিপুল সম্পদের দল বিজেপির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা বোধ হয় এই বিষয়টা ভেবে দেখার প্রয়োজনই মনে করেননি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + eighteen =