‘কেন দিল্লি যাচ্ছেন?’ পদ হারা রাহুলকে ঘিরে বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের

‘কেন দিল্লি যাচ্ছেন?’ পদ হারা রাহুলকে ঘিরে বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের

 

কলকাতা: দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান পাননি৷ কেন্দ্রীয় পদাধিকারী পদ খোয়া যেতেই দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ৪০ বছর বিজেপি করে আসা রাহুল সিনহা৷ কেন খোয়া গেল পদ? কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ জানাতে বৃহস্পতিবার দিল্লি উড়ে গেলেন রাহুল সিনহা৷ ‘পদ ফিরে পাওয়ার আশ্বাস না পেয়ে কেন দিল্লি যাচ্ছেন?’ প্রশ্ন তুলে বিমানবন্দরে পদ হারা রাহুলকে ঘিরে বিক্ষোভ অনুগামীদের৷

বিমানবন্দরে বিজেপি কর্মীদের দাবি, রাহুল সিনহা এখনও পর্যন্ত দিল্লির নেতাদের থেকে পদ ফিরে পাওয়ার আশ্বাস পাননি৷ কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত দিল্লিতে আলোচনায় বসা উচিত নয় বলেও দাবি তাঁদের৷ অনুগামীদের ক্ষোভ সামলে এদিন বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন রাহুল৷ বিক্ষোভ সামলে সংবাদমাধ্যমকে রাহুল সিনহা জানান, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা যেমন স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ ঘটেছিল, আদবাণীদের অকাকরণে ফাঁসানো হয়েছিল৷ আজ তাঁরা ঠিক যেভাবে ন্যায় পেলেন, আমার বিশ্বাস, সত্যের জয় হবে৷’’

বুধবার দুপুরের বিমানে চেপে দিল্লি উড়ে যান রাহুল সিনহা৷ এদিন দুপুরে দমদম বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে রাহুলের পথ আটকান কর্মীরা৷ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন৷ ওঠে স্লোগান৷ বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল গেরুয়া পতাকা৷ পদ হারিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন রাহুল সিনহা৷ রাহুলের বিদ্রোহ ঠেকাতে মঙ্গলবার দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়৷ সূত্রের খবর, জবাবে রাহুল জানান, ‘কোন মুখে দিল্লি যাব?’ বৃহস্পতিবার যদিও সেই মুখ নিয়েই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার বসার জন্য উড়িয়ে গেলেন৷ তবে, পদ হারিয়ে রাহুলের বিদ্রোহ মেনে নিতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি শিবির৷ আরএসএসের তরফেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে৷ এবার দিল্লি পৌঁছে হারানো পদ আদৌ ফিরে পাবেন রাহুল? তাকিয়ে অনুগামীরা৷

সঙ্ঘ মনে করছে, রাহুলবাবুর বিবৃতিতে রাজ্য বিজেপি’র সম্মানহানি হয়েছে। বিজেপি বিরোধীরা, বিশেষ করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস সুবিধা পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর কয়েকমাস পরেই বিধানসভা নির্বাচনে। এই সময় এই আচরণ প্রার্থিত ছিল না। যদিও সঙ্ঘ মনে করে, সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। রাহুলবাবুও বিজেপিতে নিজের দায়িত্ব পালনে অব্যাহত থাকবেন। দুদিন আগেই রাহুল যে বিবৃতি দিয়েছেন তা শুনেছে সঙ্ঘ। ওই বিবৃতিতে রাহুল বলেছেন, ‘‘৪০ বছর বিজেপির সেবা এবং বিজেপির একজন কর্মী হিসাবে কাজ করে এসেছি। জন্ম লঙ্গ থেকে বিজেপির সেবা করবার পুরস্কার এটাই, যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছে। তাই আমাকে সরতে হবে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কিছু হতে পারে না। আমি এর বাইরে আর কিছু বলব না। পার্টি যে পুরস্কার দিল, সেই পুরস্কারের পক্ষে ও বিপক্ষে আমি কিচ্ছু বলতে চাই না। আমি যা বলার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে বলব। এবং আমার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করব৷’’

কেন্দ্রীয় বিজেপি জাতীয় সম্পাদক পদে অনুপম হাজরাকে মনোনীত করেছে। বর্তমানে তিনিই রাজ্য থেকে একমাত্র জাতীয় সম্পদক। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলে এসেছিলেন অনুপম। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন এই সাংসদ যুব তৃণমূল সভাপতি তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচক। অনুপম নিজেই বলেছেন তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েই তৃণমূল ছেড়েছেন তিনি। কিন্তু, রাহুল সিনহা পদ থেকে অপসারণ মেনে নিতে পারেননি। তিনি ১০-১২ দিনের কথা বলেছেন। তার ওই কথাকে ভাল ভাবে নেয়নি সঙ্ঘ। সঙ্ঘের ওই শীর্ষ বাক্তিত্বেওর কথায়, ‘‘রাহুল সিনহা ওই কথা না বলতেই পারতেন। আর আগে যখন বিজেপি রাজ্য সভাপতি ছিলেন , তখনও ওই পদ থেকে যাওয়ার সময় উষ্মা প্রকাশ করেছিল। যদিও আশা রাখি কয়েকদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, তার ওই বিবৃতি বিরোধীদের হাতিয়ার হবে। যা তার দেওয়া উচিত হয়নি৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + sixteen =