কলকাতা: তাঁর হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণতা পেয়েছে কত ইমারত৷ অন্যের জন্য স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে করতে এবার নিজের স্বপ্নের অট্টালিকা গড়তে চলেছেন এই রাজমিস্ত্রী৷
আরও পড়ুন- নাগাড়ে কমছে সুস্থতা, বাড়ছে সংক্রমণ! বঙ্গে আজ আক্রান্ত সাড়ে ৯০০
তিনি মেমারি কলেজের টপার৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফার্স্ট ক্লাস৷ তাঁর হাতে ভরসা করে নিজেদের বাড়ি বানানোর ভার তুলে দিতেন বড়শুল, শক্তিগড়, কলানবগ্রামের বাসিন্দারা। সকলে জানতেন ‘ফার্স্টক্লাস’ বাড়ি বানাতে হলে নির্ভরযোগ্য একমাত্র বিশ্বজিৎ মণ্ডল। সেই বিশ্বজিৎই এবার গড়বেন দেশের ভবিষ্যৎ৷ হয়ে উঠবেন মানুষ গড়ার কারিগড়৷ পড়াবেন কলেজে৷
রাজমিস্ত্রির কাজ করার ফাঁকেই বিভিন্ন প্রান্তে কলেজে ইন্টারভিউ দিতেন বিশ্বজিৎ। স্বপ্ন ছিল, অধ্যাপনা করার৷ ভাবতেন, যদি কোনও দিনও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়! অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে তাঁর। যে হাতে এতদিন ছেনি-হাতুড়ি তুলে নিয়েছিলেন, সেই হাতেই এবার চক-ডাস্টার তুলে নেবেন তিনি। রোদে জলে পুড়ে রাজমিস্ত্রির কাজ আর নয়৷ এবার তাঁর গন্তব্য হবে কলেজ। ছেলের এই সাফল্যে খুশির হাওয়া পরিবারে। মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে হাজির পরিচিতরা।
অ্যাজবেস্টারের চাল দেওয়া দু’কামরার ছোট্ট ঘরে বাবা-মাকে নিয়ে সংসার বিশ্বজিতের। বাবা রবীন মণ্ডল এবং মা টুনি মণ্ডল পেশায় দিনমজুর। নিজেরা পড়াশোনা না জানলেও দিনরাত খেটে ছেলেকে শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। সিডিপি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন বিশ্বজিৎ। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করার পর মেমারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্নাতক পাশ করেন৷ ভর্তি হন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএ পড়ার পাশাপাশি কম্পিউটারে ডিপ্লোমা কোর্সও করেছেন৷ পড়াশোনায় ভালো হলেও জীবন কিন্তু সহজ নয়৷ পাশ করার পর শুরু হয় বিশ্বজিতের জীবনের আসল লড়াই৷
স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পরেই ২০১৭ সাল থেকেই চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন বিশ্বজিৎ। রেল, পিএসসি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি পরীক্ষা দিলেও মেলেনি কোনও চাকরি। বাবা ও মায়ের দিনমজুরির খেটে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে ঠিক মতো সংসার চলত না। এদিকে শত চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে হাতে ছেনি-হাতুড়ি তুলে নেন বিশ্বজিৎ৷ শুরু হয় তাঁর রাজমিস্ত্রির কাজ। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চলছিল কাজের খোঁজ৷ কিন্তু এর মাঝে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। বন্ধ হতে শুরু করে একের পর এক দরজা৷ লকডাউনে বন্ধ হয় বাবা-মায়ের দিন মজুরির কাজও৷ সেই কঠিন পরিস্থিতিতে কম্পিউটার জানা এমএ পাশ ছেলেটাই হয়ে যায় পুরোদস্তুর রাজমিস্ত্রি।
তবে কোনও দিনই হাল ছাড়েননি বিশ্বজিৎ৷ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন৷ অবশেষে মিলল পরিশ্রমের ফল৷ ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা টুনি মণ্ডল বলেন, “ছেলের চেয়েছিল শিক্ষক হতে। অনেক স্কুল-কলেজে পার্ট টাইম শিক্ষকতার জন্য আবেদনও করেছিল। কিন্তু চাকরি পায়নি। আজ ওঁর স্বপ্ন পূর্ণ হল।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>