পাখিদের আশ্রয় দিতে সুন্দরবনে জনতার হাতে তৈরি হচ্ছে পাখির বাসা

 ক্যানিং মহকুমার ১নং ব্লকের নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মাতলা নদীর চড়ে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫০০ টি পাখির বাসা বানানো হয়।

বিশ্বজিৎ পাল, ক্যানিং:  মানবজাতির উন্নতি কল্পে নিত্য নতুন পরিকল্পনা সমস্ত বন্য প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং যার প্রভাব ঘুরে ফিরে সেই মানুষের জীবনেই অভিশাপ হয়ে ফিরে আসছে। তবে বন্যপ্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে যে মানুষ তাঁদের মধ্যে থেকেই কিছু মানুষ এমনও আছেন যারা এই বন্য প্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য নিত্যনতুন পরিকল্পনাও গ্রহণ করছেন। যেমন আমফান পীড়িত সুন্দরবনের বনাঞ্চলে পক্ষিকুলের নিশ্চিত আশ্রয় গড়ে তুলতে  বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

সুন্দরবনের নদী সংলগ্ন এলাকার বনাঞ্চলে বিশেষত  ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে পাখির বাসা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, মহত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের ১০০ দিনের কাজের মধ্যমে। ক্যানিং মহকুমার ১নং ব্লকের নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মাতলা নদীর চড়ে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫০০ টি পাখির বাসা বানানো হয়। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে যেমন লোকালয় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনই বড়বড় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় বহু পাখির বাসা। দুর্যোগের ফলে নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অসংখ্য ডিম, মৃত্যু হয়  সদ্যজাত বহু পাখির।

এরপরেই এই পাখিদের জন্য স্থায়ী বাসা তৈরি করার উদ্যোগ নেন নিকাড়ীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাপসী সাঁফুই। তাঁরই উদ্যোগে শুরু হয় মাতলা নদীর চড়ে বেড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ গাছে পাখির বাসা বানানোর কাজ। মূলত একশো দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত এই উদ্যোগে সপরিবারে অংশ নিয়েছেন গ্রামবাসীরাই। পরিবারের স্কুল পড়ুয়ারাও যোগ দিয়েছে এই কাজে। গাছে গাছে মাটির ভাঁড়ের তৈরি বাসা বাঁধার কাজ চলছে। সুন্দরবনের কেওড়া, ধুঁদুল, পশুর এবং বাইন গাছগুলিতে চলছে ভাঁড় বাঁধার কাজ। ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক শ্যামল মন্ডল জানালেন   মহত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্যোগপীড়িত বাসিন্দাদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পাখিদের স্থায়ী বাসস্থান গড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে সুন্দর প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ। 

পঞ্চায়েত প্রাধান তাপসী সাঁফুইয়ে কথায় এই পরিকল্পনার একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, একইসঙ্গে সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। সর্বোপরি এই পরিকল্পনায় কর্ম-সংস্থানের সুরাহা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *