কলকাতা: শহরে হঠাৎ দেখা মিলেছিল ‘পলাতক’ বিমল গুরুংয়ের। সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি। তারপর তাঁর তরফ থেকে জানানো হয়, ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে লড়বেন তাঁরা। এই ঘোষণার পরেই যেন রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ পাল্টাতে শুরু করে। বিরোধীপক্ষের সমালোচনা শুরু হয় মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। পাহাড়ের সমীকরণ নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর বিমল গুরুংকে কার্যত এক হাত নিলেন বিনয় তামাং। তিনি স্পষ্ট দাবি করলেন, বিমল গুরুং তাঁদের সিলেবাসে নেই, পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।
এদিন নবান্নে বিনয় তামাং, অনিত থাপার সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে বিনয় তামাং স্পষ্ট করে জানান, বিমল গুরুং তাঁদের কাছে কোনো বিষয় নয়, বিমল গুরুংকে নিয়ে কিছু বলাও উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বৈঠকের জন্য ডেকেছিলেন তাই তাঁরা এসেছেন। পাহাড়ের রাজনীতিতে বিমল গুরুং অপ্রাসঙ্গিক, সেখানে তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। এমনকি বিমল গুরুং তাঁদের সিলেবাসের বাইরে বলে দাবি করেন বিনয়। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ, তাঁর ওপর তাঁদের ভরসা রয়েছে। একসঙ্গে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন তাঁরা, এটাই তাদের লক্ষ্য।
পাশাপাশি বিনয় তামাং জানান, আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জিটিএর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিমল গুরুংয়ের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে তিনি মন্তব্য করেন, ‘বিমল গুরুং কে?’ বিনয়ের কথায়, বিমল গুরুংয়ের চ্যাপ্টার ক্লোজড, তাঁকে গুরুত্ব দেবার কিছু নেই। একইসঙ্গে মন্তব্য করেন, পাহাড়ে এখনো পর্যন্ত শান্তি বজায় রয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে শান্তি বজায় রাখার বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
একই সঙ্গে আরও তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন বিনয় তামাং। তিনি বলেন বিমল গুরুং আদালত থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছেন। এদিকে রাজ্য সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় অভিযুক্ত করেছে, একইসঙ্গে তাঁকে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পরেও তিনি কীভাবে কলকাতার বুকে স্বমহিমায় সাংবাদিক বৈঠক করে বক্তব্য পেশ করেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছিল শুরু থেকেই। বিনয় তামাংয়ের মন্তব্য আর বিতর্ক উস্কে দিল। তবে এক্ষেত্রে ও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। বিনয়ের কথা অনুযায়ী, যদি বিমল গুরুং কোন গুরুত্ব না পান, বা যদি তার চ্যাপ্টার ক্লোজড হয়, তাহলে পাহাড়ে কেন গুরুং বিরোধী মিছিল করতে বাধ্য হলেন তার অনুগামীরা? এতদিন যে বিনয় তামাং গুরুংকে গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে আসছিলেন, আজ নবান্নে কেন তিনি সেই প্রসঙ্গ তুললেন না? তৃণমূল তো গুরুংকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে৷ আর গুরুং যদি তাঁর মাথা ব্যথার কারণ না হত, তিনি আচমকা কেন পাহাড় থেকে নবান্নে ছুটে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে গেলেন? নাকি পাহাড়ে আলগা হচ্ছে বিনয়ের দখল? গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তনে কি সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিনয় তামাং, থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।