লকডাউনে কী কী কাজ করেছেন শিক্ষকরা? নাম ধরে হিসাব নেবে বিকাশ ভবন

লকডাউনে কী কী কাজ করেছেন শিক্ষকরা? নাম ধরে হিসাব নেবে বিকাশ ভবন

 

কলকাতা:  করোনা পরিস্থিতির জেরে গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল৷ ক্লাসরুমের বদলে লকডাউনে শিক্ষার প্রাঙ্গন হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি৷ অনলাইনেই চলছে পঠন-পাঠন৷ কিন্তু প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কোন শিক্ষক কতখানি সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেন, এবার নাম ধরে সেই হিসাব রাখতে চাইছে বিকাশ ভবন৷ এই উদ্দেশে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে একটি ফর্ম পাঠানো হচ্ছে৷ 

আরও পড়ুন- বহু প্রতীক্ষিত IBPS PO পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, আজ থেকেই করা যাবে আবেদন

প্রত্যেক শিক্ষককে নিজেদের কর্মকাণ্ডের খতিয়ান জমা দিতে হবে প্রধান শিক্ষকের কাছে৷ তার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ওই ফর্ম পূরণ করে রিপোর্ট পাঠাবেন বিকাশ ভবনে৷ লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইন পড়াশোনার উপর জোড় দিতে চাইছে সরকার৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা প্রশাসনের নজর এড়ায়নি৷ বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না শিক্ষা দফতর৷ যার জন্যই এই পদক্ষেপ৷ তবে এ বিষয়ে শিক্ষকদের মতামত কী, তা এখনও জানা যায়নি৷ 

রিপোর্টে কী কী জানাতে হবে শিক্ষকদের? প্রথমত, গত ১৬ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষক কটি করে ক্লাস কোন পদ্ধতিতে নিয়েছেন এবং এর জন্য  প্রতিদিন গড়ে কত সময় ব্যয় করেছেন তা জানাতে হবে৷ এছাড়াও  প্রথম এবং দ্বিতীয় সামেটিভ মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ধারিত সিলেবাসের কত শতাংশ তাঁরা শেষ করেছেন, সেটাই উল্লেখ করতে হবে৷  এছাড়াও টেলিফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং, ইউটিউব ভিডিও, গ্রুপ ভিডিও কলিং প্রভৃতির মধ্যে তিনি কোন পদ্ধতিটি ছাত্রদের পড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছেন, তার উল্লেখও করতে হবে। এখানেই শেষ নয়৷ শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের কোনও হোম অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন কি না  এবং যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে কত শতাংশ জমা পড়েছে সেটিও  জানাতে হবে। ‘অফলাইনে ক্লাস নিয়েছি’ বলে দিলেই হবে না। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে মিড ডে মিল বিতরণের মতো প্রশাসনিক কাজেও ওই শিক্ষকের ভূমিকা কতখানি,  সেই তথ্যও জানতে চাইছে বিকাশ ভবন। 

আরও পড়ুন- কলেজ পড়ুয়াদের জন্য সুখবর! নয়া পরিষেবা চালু করল UGC

এছাড়াও, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও যদি পরিস্থিতির জন্য  স্কুল বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে কোন কার্যকরী পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চালানো যাবে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর তা  ডিআই-এর কাছে জমা দিতে হবে৷ শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশে শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকদের একটা বড় অংশ প্রতিবাদ জানাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, অনলাইনে পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার জন্য  শিক্ষকদের কাছে মৌখিক আবেদন জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ প্রয়োজনে স্থানীয় শিক্ষকদের পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে পড়া বুঝিয়ে আসতেও বলেছিলেন। কিন্তু, এ বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি৷  

আরও পড়ুন- ধর্মের চোরাস্রোতে মিশল বিজেপি’র কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি, দরাজ মোদী-শাহ

 

তবে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে তাতে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের যুক্ত করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন৷ কিন্তু এই উদ্যোগের জন্য তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কিছু সিনিয়র শিক্ষকের বক্তব্য, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও নির্দেশিকা নেই৷ তাহলে এই উদ্যোগের প্রয়োজন কি? শিক্ষকদের তরফে আরও যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, অধিকাংশ পড়ুয়ার কাছেই স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট নেই। তারা তো বাকিদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। তবে শিক্ষকদের এই যুক্তির পিছনে তাঁদের দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতাই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল৷ আবার করোনার দোহাই দিয়ে মিড ডে মিল বিতরণেও অংশ নিতে চাননি অনেক শিক্ষক। সেই খবরেও বেজায় চটেছে শিক্ষা দফতর৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + eighteen =