কলকাতা: একদিকে যখন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ, ঠিক তখন আনলক ওয়ান পর্বে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে জনজীবন৷ জনজীবন স্বাভাবিক হতে চললেও লাফিয়ে বাড়তে থাকা সংক্রমণ রুখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা যোদ্ধারা৷ সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন বাংলার কয়েক লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী৷ কিন্তু, নানান অভিযোগ তুলে সেই স্বাস্থ্যকর্মীরা এবার কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন৷ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে এবার গণ ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে সদ্য নিযুক্ত জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ একইসঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদল নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন কোচবিহারের স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় অংশ৷ জোড়া বিপত্তির জেরে বেশ খানিকটা ব্যাহত হয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা৷
করোনা আবহে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ মানসিক চাপের অভিযোগ তুলে গণইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন৷ ৪০ জন জুনিয়ার চিকিৎসক একযোগে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের কোন ধরনের কাউন্সেলিং না করে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে৷ মেডিক্যাল হাউজ স্টাফ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও চিকিৎসকের অভাবে তাদের সমস্ত বিভাগে কাজ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা৷
এই বিষয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানিয়েছেন, হাসপাতালের প্রয়োজনে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল৷ কিন্তু এঁদের মধ্যে অনেকেই দিনে ২-৩ ঘণ্টা কাজ করে ফিরে যাচ্ছেন৷ উপস্থিতিও অনিয়মিত৷ আর সেই কারণে তাঁদের শোকজ করা হয়েছে৷ পাল্টা দাবি করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ৷ তাঁদের দাবি, ৪০ জন গণ ইস্তফা দেবেন বলে ঘোষণা করা হলেও কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করছে না৷ মানসিক অবসাদের কারণে তাঁরা চরম সমস্যার সম্মুখীন বলেও দাবি তোলা হয়েছে৷ অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি তাঁদের৷ করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত থাকার পরও ফাঁকিবাজির অভিযোগ তাঁরা কোনও ভেবেই মেনে নেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ৷
অন্যদিকে আধিকারিকের বদলির প্রতিবাদে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন কোচবিহারের বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী৷ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় অংশ৷ আর তার জেরেই কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছে করোনা রোগীদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া৷
নির্দেশ জারি হওয়ার পর বুধবার রাত থেকেবিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ৷ মিছিল করে জেলা শাসকের দপ্তরে ধর্নায় বসেন তাঁরা৷ গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের শুরু হয় আন্দোলন৷ বিক্ষোভকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের দাড়ি, অবিলম্বে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে৷ তা না হলে তাঁরা তাঁদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোচবিহারে স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী৷ কিন্তু তারপরেও মেটেনি সমস্যা৷ এখনও পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের অবস্থানে অনড় বলে জানা গিয়েছে৷ আর তার জেরে শিকেয় উঠেছে আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ৷