কলকাতা: শিরোনাম লেখা যাঁদের কাজ, এবার সেই সাংবাদিকরা উঠে এলেন খবরে শিরোনামে৷ কলকাতা টিভির দুই সাংবাদিক, সুচন্দ্রিমা পাল এবং দীপ্তিমান ভট্টাচার্য। সুচন্দ্রিমা সঞ্চালক তথা রিপোর্টার৷ দীপ্তিমান সিনিয়ার রিপোর্টার, কলকাতায় খুবই পরিচিত নাম৷ ইন্টারনেট স্পেসে মুহূর্তেই তাঁদের ছবি ভাইরাল। সুন্দরবনের রাঙাবেলিয়া, কালিদাসপুরে এক কোমর জলে দাঁড়িয়ে বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তাঁরা৷ সঙ্গে রয়েছেন চিত্র সাংবাদিকরা৷ মুহূর্তেই ধন্য ধন্য। গালভরা প্রশংসার ডালি। কিন্তু, ভাল করে লক্ষ্য করে দেখা গেল, সে দলে অনেকেই ছিলেন যাঁরা ফেসবুক, টুইটারে নিজেদের হতাশা মেটাতে নিরন্তর মিডিয়া কর্মীদের বাপ-বাপান্ত করে থাকেন। নানা জায়গায় সংবাদমাধ্যমের কাজে বাধা সৃষ্টি করে নিজেরাই 'social gurdian' হয়ে ওঠেন। এদের অনেকেই হয়তো কখন বলেছেন 'মিডিয়াকে আটকে দিয়েছি, পুলিশ মিডিয়াকে কে***ছে, সে কি দৃশ্য মাইরি …।'
সংবাদমাধ্যমের কাজে বাধা দেওয়া বা সাংবাদিকদের রাস্তায় অপদস্ত করে যাঁরা আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন, তাঁরা অনেকেই সুচন্দ্রিমা, দীপ্তিমানদের ভাইরাল ছবি শেয়ার করেছেন। ফুলের ইমোজি সহ প্রশংসাসূচক মন্তব্যও করেছেন। ব্যাবসায়ী থেকে রাজনৈতিক কর্মী – যাঁরা একদিন ফেসবুকে মনের আনন্দে সাংবাদিকতার ক্লাস নিতেন, আজ তারা পা গুটিয়ে নিয়েছেন। অত জলে বুম হাতে নিয়ে কী করছে ওঁরা? ভদ্রবাড়ির ছেলে মেয়ে না? যদি সাপে কাটে? পায়ে যদি ইনফেকশন হয়? কেউ লিখেছেন কুর্নিশ, যাঁকে প্রশংসাসূচক অভিনন্দন বলা যেতে পারে। সুন্দরবনে দাঁড়িয়ে তারা হয়ত এত কাণ্ড বুঝতেও পারেননি।
আসলে, এখানে সংঘাতের জায়গা নেই তো। উমপুনে ভেসে যাওয়া সুন্দরবনের মানুষ সংবাদমাধ্যমকে শত্রু মনে করেননি। কিন্তু, শহর / গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত বা অল্প শিক্ষিতরাও আজকাল কারণে অকারণে সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণে আনন্দ পাচ্ছেন। এককালে নেতারা কাগজে প্রতিবেদন পড়ার পর রিপোর্টারকে ফোন করে সাংবাদিকতা শেখাতে আসতেন। সেই ট্রেডিশন অবশ্য আজ অল্পবিস্তর চলে। কিন্তু, আজকাল পাড়ায়-পাড়ায়, রাস্তার মোড়ে বা ফেসবুকের দেওয়ালে 'social gurdian'রাও বিনামূল্যে সাংবাদিকতা সেখান। দুই সাংবাদিকের ভাইরাল ছবি হয়ত দেখেছেন তাঁরা। মন্তব্যও করছেন। ফেসবুকে সাংবাদিক চিত্রদীপ চক্রবর্তীর মন্তব্য দিয়ে শেষ করি। – “সেই সব অর্বাচীনদের গালে এই ছবিটাই বড় থাপ্পড়। যাঁরা ঠাণ্ডা ঘরে বসে, ফেসবুকে সাংবাদিকতার চৌকিদারি করেন। কুর্নিশ এই সাংবাদিকদের।”
পেশাগত শিক্ষা। খবর করতে যাওয়ার আগে শিক্ষণবিশ সাংবাদিকদের পাখি পড়ার মত শিখিয়ে দেন তার সিনিয়াররা। “খবর করতে যাচ্ছ। নিজেই খবর হয়ে যেও না।” সাংবাদিকরা যেকোন ঘটনার ঝাঁপিয়ে পড়ে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এটাই তাদের পেশাগত মূল্যবোধ। অনেক হাঁড় হিম খবরের পিছনে কোন সাংবাদিক রয়েছেন তা একসময় জানার অবকাশ থাকত না। কখন বা শুধু নামটাই জানা যেত। কিন্তু সময় অনেক বদলে গিয়েছে। টিভিতে খবরের লাইভ কভারেজ খবর পরিবেশনের সঙ্গা বদলে দিয়েছে। এই মুহূর্তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইউ টিউব বা ইনস্টাগ্রামে মাধ্যমে 'লাইভ যন্ত্র' সকলের হাতে হাতে। সেক্ষেত্রে, সাংবাদিকতারও ধ্যানধারণাও বদলে দিয়েছে সামাজিক মাধ্যম। এখন মূল স্রোতের সংবাদমাধ্যম গুলিও দর্শকদের মন পেতে সামাজিক মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে কোভিড যুগে তা ঘোর সত্য।
দীপ্তিমান বললেন, “মন্দ লাগছে না। নতুন অনুভূতি। মানুষ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভাল ব্যাপার। সুদূর জম্মু-কাশ্মীর থেকে ফোন পেয়েছি। চেনা পরিচিতরা সেখানেও ছবি শেয়ার করেছেন। কোভিড, উমপুন সুন্দরবনের মানুষ কী অবস্থায় আছে তা দেখানোর চেষ্টা করেছি আমরা।” দীপ্তিমানদের থেকেই জানা গেল, কলকাতা টিভির তিনটি টিম কাজ করেছে।