নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় চরিত্রের নাম দিলীপ ঘোষ। সদ্য সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে তাঁকে। যা রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। শনিবার বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে নাম নেই দিলীপের। অর্থাৎ এখন দিলীপ শুধুই সাংসদ, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি আর নন। তবে দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। কিন্তু কেন দিলীপকে পদ থেকে সরানো হল?
এ বিষয়ে দিলীপের বক্তব্য, যাঁদের আগামী দিনে লোকসভায় প্রার্থী করা হবে, তাঁদের কেন্দ্রীয় সংগঠনে রাখা হবে না। কারণ, কেন্দ্রীয় সংগঠনের নেতাদের সারা দেশে ঘুরে কাজ করতে হয়। লোকসভায় যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে এবং দলের কাজে সময় দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি বিজেপির একজন বিশ্বস্ত সৈনিক। দল আমাকে যা দায়িত্ব দেবে, সেই দায়িত্ব পালন করতে আমি প্রস্তুত আছি। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে যে সাংসদরা লড়বেন, তাঁদের জাতীয় কর্মসমিতি বা কমিটিতে রাখা হবে না, যেটা অনেক আগেই আমাদের দিল্লি জানিয়েছে। যাতে সাংসদরা নিজের এলাকায় বেশি করে সময় দিতে পারেন।’
যদিও তাতে বিতর্ক থেমে থাকছে না। দিলীপ রাজ্য বিজেপি সভাপতি হওয়ার আগে বাংলায় বিজেপি একেবারেই প্রাসঙ্গিক ছিল না। কয়েকটি জেলার কিছু অংশ ছাড়া কার্যত বিজেপির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মাত্র তিনজন জিততে পেরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন দিলীপ। এরপর দিলীপের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে সাবালক হয় বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির ১৮ জন সাংসদ জিতে আসেন। এরপর বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৭৭ হয়। পশ্চিমবঙ্গে গত লোকসভায় ৪০ এবং বিধানসভায় ৩৮ শতাংশের বেশি ভোট পায় বিজেপি। যা রাজ্য বিজেপির ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শুধু রাজ্য বিজেপির নেতা বা কর্মী-সমর্থকরা নন, সকলেই মনে করেন এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সর্বকালের সেরা সভাপতি হচ্ছেন দিলীপ। বিভিন্ন সময়ে দিলীপের আলটপকা মন্তব্যে বিতর্ক হয়েছে।
একাধিকবার তিনি খোঁচা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। যে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সতর্ক করেছেন দিলীপকে। তবে তাতেও তাঁর কোনও পরিবর্তন হয়নি। স্ব-মেজাজে নিজের মতো করে হেঁটে চলে বেরিয়েছেন রাজ্যের নানা প্রান্তে। আর এটাই দিলীপের প্রধান ‘ইউএসপি’ হয়ে উঠেছে। দিলীপ অনুগামীরা বলছেন, তাঁর আলটপকা মন্তব্য নিয়ে যতই সমালোচনা করা হোক না কেন, এভাবেই কিন্তু বিজেপি রাজ্যে এতটা শক্তিশালী হয়েছে। দিলীপের ‘ভোকাল টনিক’ চাঙ্গা করেছে দলের কর্মী-সমর্থকদের। আর তার ফলেই তৃণমূলের সঙ্গে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করার সাহস পেয়েছেন দলের হাজার হাজার কর্মী সমর্থকরা। এমনটাই দাবি দিলীপ ঘোষের অনুগামীদের। আর সেই যুক্তি কিন্তু একেবারেই ফেলে দেওয়া যায় না। তাই প্রশ্ন, তাহলে কি বঙ্গ বিজেপি এবার দিলীপ-হীন হয়ে গেল? লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের কর্মসূচিতে দিলীপকে সেভাবে আর দেখা যাবে না? কিন্তু দিলীপকে যারা জানেন তাঁরা নিশ্চিত রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজস্ব ঢঙে সামিল হয়ে দিলীপ তাঁর কাজ চালিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে মেদিনীপুরের সাংসদের বড় ভরসা ‘টিম দিলীপ’-এর শক্তি। বিগত কয়েক বছর ধরে রাজ্য জুড়ে যে নিজস্ব ‘টিম’ তৈরি করেছেন দিলীপ, তাঁদের নিয়েই তিনি মাঠে ময়দানে থেকে যাবেন বলে নিশ্চিত রাজনীতির কারবারিরা। তাই বর্ণময় চরিত্র দিলীপ ঘোষের হাত ধরে রাজ্য রাজনীতি যে রাতারাতি ফ্যাকাসে হবে না, সেটা বলাই যায়।