কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা দেখে কি আদৌ লাভ আছে? কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, বাহিনীর সংখ্যা? নাকি মোতায়েন?

কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা দেখে কি আদৌ লাভ আছে? কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, বাহিনীর সংখ্যা? নাকি মোতায়েন?

কলকাতা: আদালত নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করতে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এরপরই দেখা যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন মাত্র বাইশ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। যা দেখে হতবাক হয়ে যায় রাজ্যবাসী। এরপর আবার কোর্টে যান বিরোধীরা। তার ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশ অন্তত পক্ষে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। কিন্তু প্রশ্নটা হল ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনলেই কি সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন হবে? গ্রাম বাংলার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন? কোনও বুথে গন্ডগোল হবে না? প্রত্যেকটি বুথে শাসকের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলিরও এজেন্ট থাকবে? শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা যাবে শাসক-বিরোধীর মধ্যে? এই সমস্ত প্রশ্ন যে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। এর উত্তর খুঁজবে কে?

ঘটনা হল কত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে সেটা বিচার্য বিষয় হতে পারে না। তাদের কীভাবে মোতায়েন করা হবে তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। যদি তাদের বুথ থেকে অনেক দূরে বসিয়ে রাখা হয়, শুধুই রুটমার্চ করানো হয়, বুথরক্ষার কাজে ব্যবহার করা না হয়, তাহলে ২ লক্ষ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসলেও পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে না। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা করে বাহিনীকে মোতায়েন করা। যাতে বুথের ভিতর শাসক-বিরোধী সব দলের এজেন্ট বসতে পারেন। যে অভূতপূর্ব নিরাপত্তায় একুশের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, সেই মডেলে যদি পঞ্চায়েত নির্বাচন করা যায় তবেই সাধারণ মানুষ  নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

রাজনৈতিক মহল মনে করে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মানসিকতা বদলানো। নির্বাচন ঘিরে এক ফোঁটা রক্ত ঝরতে দেব না, তার জন্য যা যা পদক্ষেপ করা উচিত সব কিছু করতে হবে, এভাবে যদি কমিশন পরিকল্পনা করে তাহলে সবটাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে ভোট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু কমিশনের উদাসীন মনোভাব দেখে সকলেই অবাক। এত বোমা পড়ল, গুলি চলল, দশ জন মানুষের প্রাণ চলে গেল, এরপরও নাকি কমিশনের কাছে হিংসা সম্পর্কিত এত তথ্য নেই! এমন আজব ঘটনা কেউ কখনও আগে দেখেছেন কি? বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একের পর এক হাড়হিম করা দৃশ্য দেখেছেন গোটা রাজ্যের মানুষ। সবাই দেখেছেন স্বজনহারা মানুষদের কান্না।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যখন সন্ত্রাস কবলিত ভাঙর পরিদর্শনে যাচ্ছেন তখন তাঁর সামনেও তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অথচ কমিশনের কাছে নাকি এত খবর নেই! এই মনোভাব যাদের তারা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবে সেটা নিয়েই তো এত প্রশ্ন। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী কত চাওয়া হল, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কত পাঠাল সেটা নিয়ে বিতর্কের থেকেও বেশি দরকার বাহিনীর জওয়ানদের পরিকল্পনা মতো বুথে বুথে মোতায়েন করা। এক ফোঁটাও রক্ত ঝরতে দেওয়া যাবে না, এই প্রতিজ্ঞা যদি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনও করে তবে পঞ্চায়েত ভোট এত সন্ত্রাসের পরেও সুষ্ঠুভাবে হওয়া সম্ভব বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। কিন্তু সেটা তারা আদৌ করবে কিনা তা নিয়ে যথারীতি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *