হাওড়া: রোজি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট বেলাটা তাঁর কেটেছে পুরনো উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। বাবার হাত ধরেই তখন পাড়ার পুজোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। এরপর বিবাহ সূত্রে কলকাতার বেলগাছিয়ার রোজি চলে আসেন বেলুড়ের পাল পরিবারে।
ফলতার জমিদার এই পাল পরিবারের দীর্ঘদিনের বসবাস বেলুড়ে। সেই সূত্রে রোজি বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোতেও অংশ নিতেন প্রতিবার। কিন্তু স্বামীর কর্মসূত্রে তাঁকে চলে আসতে হয় বেঙ্গালুরু। কিছুদিন স্বপরিবারে লন্ডনে বসবাসের পর এখন বেঙ্গালুরুর স্থায়ী বাসিন্দা রোজি পাল। তাঁর উদ্যোগেই এবার বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একমাত্র বাড়ির পুজো। পাল পরিবারের বধূ রোজির হাত ধরেই এক টুকরো বিশুদ্ধ কলকাতার শারদোৎসবের স্বাদ পেতে চলেছে বেঙ্গালুরু শহর। সেখানেও তাই এখন সাজ সাজ রব। কলকাতা থেকে আনা হয়েছে ঠাকুর তৈরির কারিগর, হালুইকার, ময়রা থেকে সব কিছুই। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকি, পুরোহিত ও ময়রাদের। একেবারে খাঁটি বাঙালিয়ানায় সেখানেই তৈরি হবে রকমারি পুজোর উপকরণ থেকে হরেক পদের মিষ্টি।
রোজি জানান, এ বছর তাঁদের পুজো পা দিল দ্বিতীয় বর্ষে। বাঙলা গানের নস্টালজিয়ায় বাঙালি খাওয়াদাওয়ার রসনাতৃপ্তিতে আর বাঙালির বিখ্যাত নির্ভেজাল পুজোর আড্ডার মেলবন্ধনে মেতে উঠবে বেঙ্গালুরুর পাল পরিবারের এই দূর্গাপুজো। রোজি জানান, বেলুড় থেকে চলে আসার পর ছোটোবেলার সেই দুর্গাপুজোর স্মৃতি খুব মিস করতেন। আর কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার সময়েই তাঁরা ঠিক করেছিলেন পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন বাঙালিয়ানা ও বাংলার ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। সেই ভাবনা থেকেই বেঙ্গালুরুতে চলে আসার পর কয়েকবছর আগে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন সোসাইটির কমিউনিটি হলে।
পরে কিছু বছর লন্ডনে কাটানোর পর ফের বেঙ্গালুরু ফিরে এসে এখন ফ্ল্যাটের মধ্যেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়৷ কলকাতার আদলে কলকাতা থেকে লোকজন এনে। তাঁর মতে, বেঙ্গালুরুতে এ বছর প্রায় একশটি দুর্গাপুজো হচ্ছে। কিন্তু সেগুলি সবই আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্ট বা বারোয়ারী পুজো। তাঁদের পুজোটাই একমাত্র বাড়ির পুজো। দূর দূরান্ত থেকে যারা আসবেন তাদের জন্যে কোভিড বিধি মেনে চলারও সব রকম ব্যবস্থা থাকছে৷ যাদের মাস্ক নেই তাদের জন্যে রাখা হচ্ছে নতুন মাস্ক। মন্ডপ যেমন স্যানিটাইজ করা হবে তেমনি দর্শনার্থীদের জন্যও থাকছে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। বেঙ্গালুরুর বিশিষ্ট পশুপ্রেমী ও সমাজসেবী রোজি জানান, মানব ধর্ম সবার আগে। সকলেই তো মায়ের সন্তান। আর এ তো মাতৃপূজা। তাই মায়ের সব সন্তানরাই যাতে এই পুজোয় অংশ নিতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখে সবার জন্যে অবাধ প্রবেশ তাঁদের পাল বাড়ির পুজোতে। ভিন রাজ্যে গিয়েও ঐতিহ্য আর নাড়ির টান ভোলেনি পাল পরিবার। তাই রোজির হাত ধরেই এবার বেঙ্গালুরু প্রত্যক্ষ করবে পারিবারিক পুজোর বনেদিয়ানা।