ভিক্ষুক মায়ের জমানো পয়সায় স্কুটার কিনল ছেলে, বালতি ভর্তি খুচরো গুণতে গলদঘর্ম কর্মীরা

ভিক্ষুক মায়ের জমানো পয়সায় স্কুটার কিনল ছেলে, বালতি ভর্তি খুচরো গুণতে গলদঘর্ম কর্মীরা

5938a5cd5577675747f8f34969c7cbc3

কলকাতা:  শোরুমে গিয়ে গাড়ি পছন্দ সারা৷ দরদামও জানা শেষ৷ এবার পালা পেমেন্টের৷ বালতি বালতি খুচরো পয়সা নিয়ে হাজির ছোকরা খরিদ্দার৷ যা দেখে মাথায় হাত ম্যানেজারের৷ শোরুমের মেঝেয় উপুর করে ঢালা হল কয়েন৷ যার অধিকাংশটাই আবার এক টাকার৷ ঘেমে নেয়ে হিসাব মেলালেন শোরুমের কর্মচারীরা৷

আরও পড়ুন- মুকুলের দুই পদ খারিজের দাবিতেহাই কোর্টে BJP, শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত

নদিয়ার কৃষ্ণনগর পালপাড়া মোড়ের কাছে একটি মোটরসাইকেল শোরুম থেকে স্কুটার কিনতে হাজির হন নদিয়ারই ভীমপুর গোবরাপোতা মাছ বাজার এলাকার যুবক রাকেশ পাঁড়ে। সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকজন ইয়ারদোস্ত৷ ৭০ হাজার টাকা দামের একটি স্কুটার পছন্দ হয় তাঁর৷ টাকাও রেডি৷ শোরুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি৷ ডিকিতে রাখা বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের বালতিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে কয়েন৷ বেশিরভাগটাই ১ টাকার৷ তারই মধ্যে উঁকি দিচ্ছে ৫০ ও ২০ পয়সাও৷ এই দিয়েই স্কুটার চাই!

ছোকরার কথা শুনে শোরুমের লোকজন তখন হতবাক৷ এত কয়েক কী ভাবে গোনা হবে? কেই বা নেবে? কিন্তু ফিরিয়ে দেওয়ার যুক্তিও নেই তাঁদের কাছে৷ দেশের চালু মুদ্রা নিতে যে তাঁরা বাধ্য৷ এরই মধ্যে মালিকের সঙ্গেও ফোনে কথা বলে নেন তাঁরা৷ ইচ্ছা না থাকলেও অগত্যা ওই খুচরো নিতেই রাজি হয়ে যান শোরুমের ম্যানেজার৷ বালিতে এনে উপুর করা হয় মেঝের উপর৷ শুরু হয় কয়েন গোনার কাজ৷ 

কিন্তু এত খুচরো কোথা থেকে এল রাকেশের কাছে? সেই রহস্য উন্মোচন করেন খোদ রাকেশই৷ তিনি জানান, তাঁর বাবা ভুল্লুর পাঁড়ে যখন মারা যান, তখন তিনি অনেক ছোট৷ সংসারের বোঝা টানতে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন মা ধুলু পাঁড়ে৷ ভিক্ষা করেই দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন৷  মা-ভাইয়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। রাকেশ ছোট। কলকাতায় একটি ম্যানহোলের লোহার ঢাকনা তৈরির কারখানায় সামান্য বেতনে কাজ করেন৷ তবে মায়ের খুব আদরের৷ একদিন মাকে এসে তিনি বলেন, এই স্বল্প উপার্জনের টাকায় মোটরসাইকেল কেনার  শখ হয়তো কোনদিনই পূরণ হবে না তাঁর। এর পরেই ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে এপর্যন্ত জমানো দু’বস্তা ১ টাকার কয়েন রাকেশের হাতে তুলে দেন তিনি। বলেন, “যা বাপ, স্কুটার কিনে শখ পূরণ কর।” এদিন কিছুটা লাজুক হাসি হেসেই রাকেশ বলেন, “আসলে জানেন তো, আমার চেয়ে মায়েরই বেশি ইচ্ছে ছিল, আমাদের ভাঙা ঘরে একটা স্কুটার থাক।” 

রাকেশ বলেন, ‘‘সংসার চালাতে দুই, পাঁচ কিংবা দশ টাকার কয়েন সব খরচ হয়ে যেত৷ তবে এক টাকার কয়েনগুলো মা জমিয়ে রাখত৷ আমাদের এলাকায় ছোট এক টাকার কয়েন কেউ নিতে চায় না। তাই, মনে ধন্দ ছিল,  গাড়ির শোরুমে কি এত কয়েন নেবে?  তাড়িয়ে দেবে না তো?’’  কিন্তু রাকেশের বন্ধুরা ইন্টারনেট ঘেঁটে জানান, হালেই তামিলনাড়ুতে এক ব্যক্তি স্রেফ খুচরো দিয়ে মোটরবাইক কিনেছেন। তাহলে রাকেশ পারবে না কেন? অবশেষে ‘ভিক্ষার ধনে’ই পূরণ হল রাকেশ ও তাঁর মায়ের শখ৷