‘মা, শিঙাড়া নিয়ে ফিরো,’ বলেও ‘কুইট’ করল মেধাবী ছাত্র, কিন্তু কেন?

‘মা, শিঙাড়া নিয়ে ফিরো,’ বলেও ‘কুইট’ করল মেধাবী ছাত্র, কিন্তু কেন?

7f5259687ad8d0fd12c302b3bf7d4800

কলকাতা: সাদা বোর্ডে অঙ্ক কষা৷ তার নীচে ইংরেজি হরফে ‘মা আই কুইট’ লিখে আত্মহত্যা করে মেধাবী ছাত্র সোমনাথ সাহা৷ সেই লেখার নীচে আঁকা ছিল একটি স্মাইলি আর সময়৷ কিন্তু কেন পড়াশোনার চাপে এভাবে আত্মহত্যা করল একজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী?   

আরও পড়ুন- এক ধাক্কায় পারদ নামল ৩ ডিগ্রি! কেমন কাটবে সরস্বতী পুজো? যা জানাল হাওয়া অফিস

শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরের বাসিন্দা সোমনাথ সাহা ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল৷ শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এককথায় ছিল অঙ্ক পাগল৷ কিন্তু ২৫ জানুয়ারি দুপুরে এক অজানা কারণে চরম পদক্ষেপ নিল সে৷ অথচ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সাদা বোর্ডে অঙ্ক কষেছে সোমনাথ৷ পরে ওই বোর্ডেই সময় উল্লেখ করে লেখে ‘মা আই কুইট’৷ ছেলের মৃত্যুর পর বেসামাল গোটা পরিবার৷ ছেলের শোকে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন মা৷ তাঁকে নিয়ে ছুটতে হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে৷ তিনি নিজেও পেশায় একজন শিক্ষিকা৷ ঘটনার দিন যখন স্কুলে বেরচ্ছেন, তখন সোমনাথ তাঁকে বলেছিল, মা ফেরার সময় শিঙারা নিয়ে এসে৷ সন্ধে সাড়ে ছ’টায় সময় মা যখন শিঙারা নিয়ে ফেরেন, তখন সব শেষ৷  

জানা গিয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রাইভেট টিউশন পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল সোমনাথ৷ বন্ধুদের বলেছিল বাড়িতে নিজেই পড়বে৷ কিন্তু তাই বলে নিজেকে এই ভাবে গুটিয়ে নিয়ে আত্মহত্যা? তা কেউই বুঝে উঠতে পারেনি৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ চিকিৎসা বিভাগের প্রধান নির্মল বেরার কথায়, ‘‘মানসিক অবসাদ থেকেই এই চরম পদক্ষেপ৷ কখনও দেখা যায় পরিবারের চাপ, কখনও আবার মানসিক অবসাদে এই ধরনের ঘটনা ঘটে৷ এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওই ছাত্র পড়াশোনায় ভাল। লকডাউনে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়িতে থেকেও নানা কারণে মানসিক আবসাদে ভুগছিল। তাই টিউশন বন্ধ করে দেয়। এক সময় বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছিল।’’

তিনি বলেন, জানা গিয়েছে, চরম পদক্ষেপ নেওয়ার ঠিক আগের দিন ওই ছাত্র তার বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে করে বলেছিল৷ আত্মহত্যার আগে এ ধরনের প্রবণতা অনেক সময় দেখা দেয়। অনেকেই ধার-দেনা মিটিয়ে দেয়। বন্ধুদের ফোন করে। অর্থাৎ, চলে যাওয়ার আগে শেষ কথা। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা মাফিক৷  এক্ষেত্রে বাড়ির কেউ চাপ দেয়নি৷ কিন্তু মানসিক সমস্যার জেরেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে৷ 

এই ঘটনার পর মনোবিদ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ, পড়াশোনা নিয়ে পড়ুয়ারা যেন অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে ফেলে৷ সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকদেরও এই বিষটি মাথায় রাখতে হবে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পাড়ে পড়ুয়ারা৷ সক্ষেত্রে অবসাদ কাটে৷ স্কুল বন্ধ, তাই অভিভাবকদের আরও বেশি করে বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের মনের খোঁজ নিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *