এবার বস্তা হাতে দফতরে ছুটবেন শিক্ষকরা! সরকারি নির্দেশে ‘অপমানিত’ শিক্ষক সমাজ!

এবার বস্তা হাতে দফতরে ছুটবেন শিক্ষকরা! সরকারি নির্দেশে ‘অপমানিত’ শিক্ষক সমাজ!

 

ইংরেজবাজার: করোনা আবহে বন্ধ স্কুল-কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ কার্যত লাটে স্কুলের পঠনপাঠন৷ টিভির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার হলেও তা স্থায়ী হয়নি৷ চলছে ফোনে-ফোনে শিক্ষা৷ করোনা-কালে স্কুলছুট রুখতে সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও পড়ুয়াদের স্বার্থে চলছে মিড ডে মিলের খাবার বিলির কাজ৷ তবে, এই মিড-ডে-মিল বিলি-বণ্টন নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি৷ করোনা-কালেও থামেনি সেই বিতর্ক৷ এবার সেই বিতর্ক আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিল প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি৷ মিড-ডে-মিল সংক্রান্ত প্রশাসনের ‘অপমানজনক’ বিজ্ঞপ্তি ঘিরে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষকদের একাংশের অন্দরে৷

মিড ডে মিলের গুণমান নিয়ে আগেও উঠেছে প্রশ্ন৷ খাবার বিলিবণ্টন নিয়েও রয়েছে একাধিক অনিয়ম৷ কখনও নুন ভাত জুটেছে পড়ুয়াদের পাতে, কখনও আবার চাল না থাকায় মিলেছে শুকনো মুড়ি৷ মিড ডে মিলের অনিয়মের পিছনে প্রশাসনের উদাসীনতা, শাসকদলের একাংশের মদত, স্কুল পরিচালন কমিটির জোড়াজুড়ি, শিক্ষকদের একাংশের যোগসাজস কাঠগড়ায় উঠেছে৷ মিড ডে মিলে দুর্নীতি-অনিয়ম বেনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়৷ এবার সেই অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে খোদ শিক্ষকদের দিকে কার্যত ঘুরপথে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক আঙুল তোলার চেষ্টা করছেন বলে চাঞ্চল্য অভিযোগ তুলছেন শিক্ষকদের একাংশ৷

ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার৷ মালদহের গাজোল সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের তরফ একটি বিজ্ঞপ্তি (১৯৪০/গাজোল) জারি করা হয়৷ সেখানে সমস্ত প্রধান শিক্ষকদের চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, এবার থেকে মিড ডে মিলের জন্য ব্যবহৃত খালি হয়ে যাওয়া চালের বস্তা ফেরত দিতে হবে৷ কিন্তু হঠাৎ কেন চালের বস্তা ফেরত দিতে হবে শিক্ষকদের? এই নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ৷ বিজ্ঞপ্তিতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মিড ডে মিলে খালি চালের বস্তা ফেরত দিতে৷ এবার থেকে প্রত্যেক মাসে চালের হিসেবের কাগজপত্র যখন দেখাতে হবে, তখন খালি চালের বস্তা নিয়ে সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে শিক্ষকদের৷ কিন্তু মিড ডে মিলে হিসাব দাখিল করার সময় হঠাৎ কেন খালি চালের বস্তা তলব করা হল? বিজ্ঞপ্তি তা স্পষ্ট করা না হলেও পিছনে অন্য আশঙ্কা করছেন শিক্ষকদের একাংশ৷

বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি

সরকারি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, তাহলে খাতায়-কলমে যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, তার কি কোন গুরুত্ব নেই? খাতায়-কলমে হিসাব-নিকাশ যখন দাখিল করা হয়, তখন কেন শিক্ষকরা ফাঁকা চালের বস্তা হাতে নিয়ে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দফতরে হত্যা দেবেন? ফাঁকা বস্তার হিসাব নেওয়া মানে, ‘চাল চুরি’ হচ্ছে কি তা, দেখার কৌশল? ফাঁকা চালের বস্তার মধ্যেই কি ‘চাল চুরি’র রহস্য উদঘাটিত হবে? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকদের একাংশ৷

ফাঁকা বস্তার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন৷ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কলকাতার কৈলাস বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মিত্র জানান, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের মিড ডে মিলের চালের বস্তা ফেরত দেওয়ার জন্য যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ সমিতির পক্ষ থেকে সমস্ত প্রধান শিক্ষকদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে, তারা যেন বিডিও যে ভাষায় এবং যে পদ্ধতিতে চালের বস্তা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ করুন এবং মিড ডে মিলের কাগজ জমা দেওয়ার সময় চালের বস্তা ফেরত না দিয়ে বিডিওকে লিখিতভাবে জানান, প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমেও যে প্রক্রিয়ায় এবং পদ্ধতিতে বিদ্যালয়ে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়, সেই একই প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক ভাবেই তারা বিদ্যালয় থেকে চালের বস্তা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন৷ কোন কারণেই প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা চালের বস্তা ফেরত দিতে যাবেন না৷’’

শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত এমন নির্দেশিকা কোনও বিডিও দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই৷ যদি বস্তা নিয়ে যেতেই হয় তাহলে বিডিও তাঁর লোকজনকে দিয়ে বিদ্যালয় থেকে তা নিয়ে যেতে পারে, তাতে কারও আপত্তি নেই৷ নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, চালের হিসেবে যখন দিতে আসবেন, সেই সময়ে শিক্ষকরা যেন খালি বস্তাগুলি সঙ্গে নিয়ে আসেন৷ শিক্ষকদের বস্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশিকা অসন্মানজন৷ এই অপমানজনক নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি৷’’

শিক্ষক সংগঠন অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, ‘‘বস্তা জমার এই নির্দেশ গোটা রাজ্যের শিক্ষক জাতির সম্মানহানি করেছেন গাজোলের বিডিও৷ অবিলম্বে বিডিও মহাশয়ের এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে বিবৃতি প্রকাশ করুক৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *