barasat
বারাসত: আর পাঁচটা অসহায় মেয়ের মতো মুখ বুজে স্বামীর অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করা নয়। বরং জীবনের লড়াই করেছেন আত্মবিশ্বাসে ভর করে। প্রেম করে বিয়ে৷ কিন্তু, বিয়ের পর সামনে আসে স্বামীর আসল ‘রূপ’৷ সন্তান হওয়ার পর স্বামীর অত্যাচার আরও বাড়তে থাকে৷ তবে ভেঙে পড়েননি৷ তাই শ্বশুরবাড়িতে পড়ে পড়ে মার না খেয়ে ফিরে আসেন বাপের বাড়ি। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম৷ সেই লড়াই শেষে জয়ী মা দুর্গা
স্বামীকে ডিভোর্স দিলেও বাপের বাড়ির ‘বোঝা’ হতে চাননি বারাসতের পূর্বাচলের বাসিন্দা কাজল লোহার। শুরু করেন নিজের উপার্জন৷ তিনি পেশায় একজন মহিলা টোটোচালক৷ তাঁকে বারাসত শহরের অনেকেই চেনেন। তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে৷ তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী এবং প্রশিক্ষক। টোটো চালিয়ে ছেলের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দক্ষ হাতে চালান বাচ্চাদের নাচের স্কুল। ভালো ছবিও আঁকেন কাজল৷ বর্তমানে এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি নাচের দল৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের নাচের পাশাপাশি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নৃত্যনাট্য অভিনয় করেন তাঁরা। আর দেবী দুর্গার রূপে মঞ্চে আসেন স্বয়ং কাজল লোহার। আকাশে-বাতাসে যখন আগমনীর সুর, তখন বারাসতের পূর্বাচলের বাসিন্দাদের কাছে কাজলই যেন ‘জীবন্ত দশভুজা’।
বছর আটেক আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মধ্যমগ্রামের এক তরুণকে। শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসার পর অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন কাজল। ছেলের যখন দু’বছর বয়স, তখন ঋণ নিয়ে একটি টোটো কেনেন এবং নিজেই তা চালাতে শুরু করেন। টোটো চালিয়ে উপার্জনের পাশাপাশি প্রায় ১৫টি শিশুকে খুব কম পয়সায় নাচও শেখাচ্ছেন তিন। কাজলের কথায়, ‘‘ছেলের দু’বছরের জন্মদিনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, নিজের পায়ে দাঁড়াব। সকলের কাছে আমার লড়াইয়ের কাহিনী তুলে ধরব। কোনও পেশাই তুচ্ছ নয়। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সারাদিন টোটো চালিয়ে যা রোজগার হয়, তাতে কোনও রকমে সংসার চলে যায়। আমাদের আগে টালির চালের বাড়ি ছিল। বর্তমানে সরকারি প্রকল্পে একটি বাড়ি পেয়েছি৷ তবে কাজ শেষ হয়নি।’’