বাঁকুড়ার এই জঙ্গলে প্রস্তুতি নিতেন ক্ষুদিরাম! বাংলার বিপ্লবীদের এক সময়ের গোপন শিবির!

বাঁকুড়ার এই জঙ্গলে প্রস্তুতি নিতেন ক্ষুদিরাম! বাংলার বিপ্লবীদের এক সময়ের গোপন শিবির!

বাঁকুড়া:  জঙ্গলের মাঝে এক টুকরো ইতিহাস। যা বছরের পর বছর ধরে বহন করে চলেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা কাহিনীকে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের উদ্যেশ্যে বাঁকুড়ার জঙ্গলের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এক গোপন ঘাঁটি। বারিকুল থানার ছেঁদাপাথরের অদূরের সেই গোপন ঘাঁটি আজও বিস্ময়।

জংগলমহল মানে আন্দোলন, মুখ আর মুখোশের খেলা। আর একটা সময় এই জঙ্গলমহলে বসেই দেশ থেকে বৃটিশদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন শহীদ ক্ষুদিরাম,বারিন ঘোষ,নরেন গোঁসাইরা। শহর থেকে প্রায় ৮৫ কিমি দূরের শাল, সেগুন ঘেরা গভীর অরন্য পেরিয়ে গেলেই ছেন্দাপাথর। বিপ্লবী আন্দোলনের সময় এখানেই আত্মগোপন করেছিলেন শহীদ ক্ষুদিরাম বসু। শোনা যায়, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে, অবিভক্ত বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত সমিতি গঠিত হয়েছিল। সেগুলির সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের উদ্যেশ্যে তৈরি হয়েছিল এই গোপন ঘাঁটি। গুপ্ত ঘাঁটির পাশাপাশি আত্মগোপনের জন্য এক সুড়ঙ্গও তৈরি করেছিলেন বিপ্লবীরা। যেখানে, বোমা বানানো, অস্ত্র প্রশিক্ষন কার্যকলাপ চলত। গবেষকদের কেউ কেউ বলেন, বোমা বা বন্দুকের অনুশীলনের সময় শব্দ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্যই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিলেন বিপ্লবীরা।

শোনা যায়, অগ্নিযুগে মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ায় একাধিক সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল।  বাঁকুড়ার অম্বিকানগরের রাজা রাইচরণ ধবলদেও পৃথকভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই শহীদ ক্ষুদিরাম, বারিন ঘোষ,নরেন গোঁসাইরা এই দুর্গম ছেন্দাপাথরকে স্বদেশী কার্যকলাপের জন্য বেছে নেন। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলার পিছনেও অবদান ছিল রাজা রাইচরণ ধবলদেওয়ের। সেই সময় বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ বা অস্ত্র তৈরি করা যত্রতত্র সম্ভব ছিল না। এর জন্য ব্রিটিশ পুলিশের চোখের আড়ালে থাকা একটি জায়গার প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজন মেটায় ছেঁদাপাথর।  যেখানে বসে বিপ্লবীরা মাটির বোমা তৈরি করতেন।

গবেষকদের মত, অগ্নিযুগে কলকাতা ও কলকাতার বাইরে যেসব সশস্ত্র গুপ্ত সমিতিগুলি ছিল, সেই সকল বিপ্লবীদের এক ছাতার তলায় এনে দিয়েছিল ছেঁদাপাথরের বিপ্লবী ঘাঁটি। বিশেষ করে এর ভৌগোলিক অবস্থান বিপ্লবীদের বিশেষভাবে সুবিধা দিত এখান থেকে পশ্চিমে গেলে পুরুলিয়া, দক্ষিণে মেদিনীপুর আর দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছুটা এগোলেই অধূনা ঝাড়খন্ড অর্থাৎ তৎকালীন বিহার প্রদেশ।

তাই বৈপ্লবিক কার্যকলাপের জন্য বিপ্লবীরা বেছে নেন এই স্থানটিকে। ১৯০৮ সালে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় নরেন গোঁসাই রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে ছেঁদাপাথরের গোপন বিপ্লবী ঘাঁটির কথা জানিয়ে দেন। তারপর বাধ্য হয়ে ঘাঁটি ছেড়ে চলে যান বিপ্লবীরা। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর এখন অনেকটাই অভিযোজিত ছেন্দাপাথর। বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপে মাটির গুহা এখন ইঁট বাঁধানো কূঁয়োয় রুপ পেয়েছে, সেখানে বসেছে শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তি। উন্নত হয়েছে যাতায়াত। তাই আগামী দিনে বাঁকুড়ার পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিক প্রত্যন্ত এই অঞ্চল, এটাই দাবি স্থানিয়দের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + six =