পরিষেবায় খামতি নেই, তবুও জীবন সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত ব্যাঙ্ক কর্মীরা

পরিষেবায় খামতি নেই, তবুও জীবন সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত ব্যাঙ্ক কর্মীরা

মৌমিতা বিশ্বাস: লকডাউনে শুনশান গোটা দেশ৷ বন্ধ অফিস-কাছাড়ি৷ বন্ধ যান চলাচল৷ কিন্তু বন্ধ নেই ব্যাঙ্ক পরিষেবা৷ কারণ জরুরি পরিষেবার মধ্যেই রাখা হয়েছে ব্যাঙ্ককে৷ তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে চলেছেন ব্যাঙ্কের অসংখ্য কর্মীরা৷ যাবতীয় সমস্যার মোকাবিলা করে রোস্টার মেনে মানুষকে পরিষেবা দিতে অফিস পৌঁছচ্ছেন তাঁরা৷ প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের৷ কিন্তু যখন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে হাসপাতালের সাফাইকর্মী এবং বাড়ি বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া কর্মীদের বিমার আওতায় আনা হচ্ছে, তখন ব্রাত্য ব্যাঙ্কাররা৷ ব্যাঙ্ক কর্মীদের বিষয়ে একটি বাক্যও খরচ করছে না প্রশাসন৷

প্রতিদিন নানা সমস্যাকে হার মানিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ব্যাঙ্ক কর্মীদের৷ ব্যাঙ্কের যাঁরা উচ্চপদস্থ কর্মী, তাঁরা হয়তো নিজেদের গাড়িতে চেপেই অফিসে পৌঁছন৷ ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করাও তাঁদের পক্ষে দুষ্কর নয়৷ কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন প্রতিদিন বাসে-ট্রেনে চেপে অফিস পৌঁছনো ব্যাঙ্কের অধস্তন কর্মীরা৷ বেশির ভাগ কর্মীই অনেক দূর থেকে কাজ করতে আসেন৷ প্রতিদিন একাকী গাড়ি ভাড়া করে আসা তাঁদের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব৷ তাই বাধ্য হয়েই ভাড়া গাড়িতে একসঙ্গে দল বেঁধে অফিস যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা৷

কেন্দ্রের সাফ নির্দেশ, করোনা প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখুন৷ কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই নির্দেশ পালন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাছে৷ যদিও প্রতিটি ব্যাঙ্কই কর্মীদের যাতাযাতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই কম৷

গ্রামাঞ্চলের ব্যাঙ্কে কাজ করা কর্মীদের কাছে সমস্যার এখানেই শেষ নয়৷ অভিযোগ, শহরাঞ্চলের ব্যাঙ্কগুলিতে কড়া ব্যবস্থা থাকলেও, গ্রামে তা অনেকটাই শিথিল৷ এখানে লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব, কোনওটাই সুনির্দিষ্টভাবে পালন করা হচ্ছে না৷ এমনও দেখা গিয়েছে, মুম্বই, তামিলনাড়ু, কেরল এমনকী দুবাই থেকে গ্রামে ফিরে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিছু মানুষ৷ হোম কোয়ারেন্টাইনের কোনও বালাই নেই৷ এমনকী তাঁরা নিজেদের কাজে প্রায় প্রতিদিনই চলে আসছেন ব্যাঙ্কে৷ গ্রামে সচেতনতার অভাব রয়েছে৷ ন্যূনতম মাস্কটুকুও নেই তাঁদের সঙ্গে৷ এই পরিস্থিতিতে কি ঝুঁকি বাড়ছে না ব্যাঙ্ক কর্মীদের?

কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রের জন ধন যোজনার আক্যাউন্টে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এর পর থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায়৷ টাকা ঢুকেছে কিনা, সেই খবর নিতেই প্রতিদিন জমায়েত হচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষ৷ বলার পরেও অনেক সময় তাঁরা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন না৷ এর উপর বলা হয়েছে, কোনও কর্মী আক্রান্ত হলে তার দায়ভার নিতে হবে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে৷

গ্রাহকদের খুব সামনে থেকেই কাজ করতে হয় ব্যাঙ্ক কর্মীদের৷ সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের নানা অভিযোগ ও প্রশ্নের৷  কেন ব্যাঙ্ক পাসবুক প্রিন্ট হবে না? কেন সমস্ত পরিষেবা পাওয়া যাবে না? মুখোমুখি হতে হয় এমন সব প্রশ্নের৷ অথচ, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)-র সাফ নির্দেশ, লকডাউন পরিস্থিতিতে টাকা জমা, তোলা, টাকা পাঠানো, সরকারি কাজ ও চেক ক্লিয়ারেন্স ছাড়া অন্য কোনও কাজ হবে না৷ এর পরও প্রশ্নের শেষ নেই৷ ব্যাঙ্ককর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা পরিষেবা দিতে প্রস্তুত৷ কিন্তু তাঁদের সুরক্ষার কথা একবারেও ভেবে দেখছে না সরকার৷ প্রত্যেকের পরিবার আছে৷ দিনের শেষে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদেরও৷ সারা দিন এত মানুষের মাঝে তাঁরা যে নিরাপদ রয়েছে, এমন নিশ্চয়তা কি দিতে পারবে সরকার?

তাঁদের আফসোস, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী কেউ একবারের তরেও ব্যাঙ্কারদের কথা উল্লেখ করছেন না৷  ব্যাঙ্ককর্মী ছাড়া সকলের বিমা হচ্ছে৷ অথচ সরকার তাঁদের নিয়ে উদাসীন৷ প্রথমে বলা হয়েছিল জরুরি পরিস্থিতিতে মফস্বল এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার ব্যবধানে ব্যাঙ্কের একটি করে শাখা খোলা থাকবে৷ শহর ও মেট্রো সিটিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু শাখা খুলবে আর গ্রামাঞ্চলে এক দিন পর পর ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে৷ সকাল ১০টা থেকে ২ টো পর্যন্ত ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু রাখা হবে৷ কিন্তু নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পয়লা এপ্রিল থেকে ১০ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত খোলা থাকবে ব্যাঙ্ক৷ প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে নিয়ম৷ অর্থাৎ আরও বাড়তি ২ ঘণ্টা কাজ করতে হবে ব্যাঙ্ক কর্মীদের৷ ব্যাঙ্ক বন্ধ করতে ৬টা সাড়ে ৬টা বেজে যাবে৷ যার জেরে বাড়ি ফিরতেও সমস্যায় পড়বেন কর্মীরা৷  যাঁরা বাড়ি ছেড়ে কর্মসূত্রে একা থাকেন, সবকিছু একার হাতে সামলান, সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা৷ কিন্তু তাঁদের কথা ভাবছে না কেউ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *